পাবনার ঈশ্বরদীতে কাকন বাহিনীর তাণ্ডব: গুলি, লুটপাট ও জনমনে আতঙ্ক

পাবনার ঈশ্বরদীতে কাকন বাহিনীর তাণ্ডব: গুলি, লুটপাট ও জনমনে আতঙ্ক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 7, 2025 10:49 পূর্বাহ্ন

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সারা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া বালুরঘাট এলাকায় সংঘটিত হয়েছে রীতিমতো রুদ্ধশ্বাস এক সন্ত্রাসী হামলা। বৃহস্পতিবার (৫ মে) দিনদুপুরে নদীপথে স্পিডবোর্ড ও ট্রলারে এসে ভারী অস্ত্রসহ হামলা চালিয়েছে কুখ্যাত কাকন বাহিনী। এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে, বালু ব্যবসায়ীদের অফিস ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পুরো এলাকাজুড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নাটোরের লালপুর এলাকার কাকন বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে লালপুর ও ঈশ্বরদী এলাকার বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা প্রায় প্রতিদিনই নদীপথে এসে বালু ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করছে। মাছ ধরা ও নৌপথে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে জেলে ও কৃষকদের জন্য।

বৃহস্পতিবারের ঘটনার সময় সাতজন ব্যক্তি আহত হন। তারা জানান, কাকন বাহিনীর সদস্যরা হঠাৎ করেই নদীপথে এসে একের পর এক গুলি ছুঁড়তে থাকে, এরপর স্থানীয় বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় এবং লুটপাট করে। অনেক মানুষ প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়, কেউ কেউ লুকিয়ে পড়ে। ভয়ে সাধারণ মানুষ এখন আর নদীপথ বা আশপাশের রাস্তা ব্যবহার করতে সাহস পাচ্ছে না।

এক আহত ব্যবসায়ী বলেন,

“আমরা তো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম। হঠাৎ গুলি শুরু হয়, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ঘরে ঘরে ঢুকে লুটপাট শুরু করে। আমাদের কর্মচারীদের মধ্যে সাতজন আহত হয়েছে।”

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বাহিনীটি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে স্পিডবোর্ড ও নৌকা ব্যবহার করে ইসলামপাড়া ও সারাঘাট এলাকায় নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, নদীর পাড়ে বসবাসরত পাঁচ শতাধিক পরিবার এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

ঘটনার পর নিরাপত্তা চেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা মানববন্ধন করেছেন এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ইতোমধ্যেই পুলিশ ও যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

পাবনার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান,

“আমরা অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতে অভিযান চালাচ্ছি। ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালানো হয়েছে। মামলার আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”

লালপুর থানার আওতাধীন বাহাদুরপুর এলাকায় যে বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেই মূলত এই বিরোধের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। বালু উত্তোলন ও পরিবহনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট আধিপত্যের দ্বন্দ্বই এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেছনে বলে মনে করা হচ্ছে।


বালুমহাল কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী হামলা ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় জনজীবনে যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা এখনই দমন না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। স্থানীয়রা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন।


সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%