যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যুতে দু’দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান থাকায় এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
শুরু থেকেই ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ গত সোমবার ট্রুথ সোশাল-এ দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দেন, “কোনভাবেই তেহরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই হুমকির তোয়াক্কা না করে ইরান বরাবরই নিজেদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির পক্ষে অনড় অবস্থান বজায় রেখেছে। তেহরান বলছে, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হবে না— এটি যদি যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হয়, তবে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু তাদের দাবি যদি অবাস্তব হয়, অর্থাৎ আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কার্যক্রমের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তবে কোনো চুক্তির প্রশ্নই ওঠে না।”
এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, আগের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসে ইরানকে স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দিয়েই নতুন এক অন্তর্বর্তী প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন।
নিউইয়র্ক টাইমস-এর তথ্যমতে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের স্বাক্ষরিত ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইরানকে নতুন পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। একইসাথে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে মার্কিন প্রশাসন।
প্রস্তাবিত প্রকল্পে ইরান যদি সুফল পেতে শুরু করে, তবে দেশটির অন্যান্য সক্রিয় পারমাণবিক স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়ার শর্তও রয়েছে এই চুক্তিতে।
এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইরান। প্রতিক্রিয়া জানায়নি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ইসরাইলও। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরান প্রস্তাবিত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলে দেশটির ওপর সামরিক হামলার কথা বিবেচনা করছে ইসরাইল।
বিশ্লেষকদের ধারণা, একদিকে মুখে কড়া হুমকি দিলেও ইরানের অনড় অবস্থান এবং বাস্তব পরিস্থিতির চাপে ট্রাম্প প্রশাসনকে অবশেষে নমনীয় হতে হচ্ছে।