শরীয়তপুরে গৃহকর্মী নাজমার রহস্যজনক মৃত্যু: পরিবারের কান্না, সন্দেহ—হত্যা করে লুট করা হয়েছে স্বর্ণালংকার

শরীয়তপুর পৌরসভার রূপনগর এলাকায় ঘটেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। ভাড়া বাসার খাটের ওপর গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার হলো নাজমা বেগম (৪২) নামের এক গৃহকর্মীর নিথর দেহ। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল মালেক মাদবরের বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
সাধারণ এক নারী, নিজের পরিশ্রমে ছেলেকে মানুষ করার স্বপ্নে জীবন কাটাচ্ছিলেন নাজমা। কিন্তু সেই জীবন থেমে গেল নির্মম এক পরিণতিতে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ছেলে নিলয়কে নিয়ে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন নাজমা। সংসারের ভার বহনের জন্য প্রতিদিন অন্যের ঘরে গৃহকর্মীর কাজ করতেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে ছেলে স্কুলে গেলে একাই ছিলেন বাড়িতে। দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে এসে খাটের ওপর মাকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় নিলয়।
কাঁদতে কাঁদতে নিলয় জানায়, “স্কুল থেকে ফিরে দেখি মা খাটে শুয়ে আছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছে। পরে ডাকলে কোনো সাড়া দিচ্ছে না… তারপর দেখি মায়ের গলায় ফাঁস দেওয়া। আমার মা আর নেই…”
বিজ্ঞাপন
এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যের পর প্রতিবেশীরা ছুটে আসে, খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পরে পালং মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
নাজমার ভাই দ্বীন ইসলাম অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, “আমার বোনের কিছু স্বর্ণালংকার কিছুদিন আগে বন্দক থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল। সেই গয়না বাসায় ছিল। এখন সব উধাও। মনে হচ্ছে, সেই গয়নার লোভেই ওকে হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার বোনের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”
বাসার মালিকের স্ত্রী নাজমুন নাহার বলেন, “নাজমা খুবই সৎ, পরিশ্রমী ও ভদ্র মহিলা ছিলেন। অন্যের ঘরে কাজ করে ছেলেকে মানুষ করার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু তাকে যে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে গলার, নাকের আর হাতের গয়না নিয়ে গেছে—এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। আমরা তার হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, “ঘটনাস্থলের আলামত দেখে মনে হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আলমারি খোলা ছিল, জিনিসপত্র ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করছি, কেউ তাকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে। তদন্ত চলছে, সত্য উদঘাটনে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
একজন মা, এক সংগ্রামী নারী—যিনি ছেলেকে মানুষ করতে জীবনভর লড়েছেন—আজ সেই মা লুটে গেছে দুর্বৃত্তের হাতে। রূপনগরের মানুষ এখন শুধু একটাই দাবি তুলেছে, “নাজমার হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার হোক।”
