ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের গণবহিষ্কার আদেশ স্থগিত করলেন ফেডারেল বিচারক

ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলান গণবহিষ্কার আদেশে মার্কিন আদালতের স্থগিতাদেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ মার্চ 16, 2025 5:54 পূর্বাহ্ন

ট্রাম্পের ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের গণবহিষ্কার আদেশ স্থগিত করলেন ফেডারেল বিচারক। একজন ফেডারেল বিচারক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ২২৭ বছর পুরোনো একটি আইন ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলানদের গণহারে বহিষ্কার করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ট্রাম্প শনিবার ঘোষণা দেন যে ভেনেজুয়েলার অপরাধী গ্যাং ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’র সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “অনিয়মিত যুদ্ধ” চালাচ্ছে এবং তিনি তাদের ১৭৯৮ সালের অ্যালিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী বহিষ্কার করবেন।

কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় ইউএস ডিসট্রিক্ট জজ জেমস বোয়াসবার্গ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই আদেশের আওতায় যেসব বহিষ্কার কার্যক্রম চলছিল, তা ১৪ দিনের জন্য স্থগিত করেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারক শুনানিতে জানান তিনি জানতে পেরেছেন বহিষ্কৃতদের বহনকারী বিমানের উড়াল চলছে এবং তিনি সেগুলো ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

এই আইনটি যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই ব্যক্তিদের আটক ও বহিষ্কার করার ক্ষমতা দেয়। এটি সর্বশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানি বংশোদ্ভূত মানুষদের আটক করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

ট্রাম্প শনিবারের ঘোষণায় জানান, ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাং “যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে আক্রমণ বা লুটতরাজের চেষ্টা করছে এবং হুমকি দিচ্ছে।”

তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ বিতর্কিত আইন ব্যবহার করে অবৈধ অভিবাসনকারীদের গণহারে বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইতোমধ্যে ট্রাম্পের এই আইন ব্যবহারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল, এমনকি তিনি ঘোষণা দেওয়ার আগেই।

শুনানিতে বিচারক বলেন, আইনে থাকা “আক্রমণ” এবং “লুটতরাজ” শব্দগুলো মূলত শত্রু রাষ্ট্রের দ্বারা সংঘটিত শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ট্রাম্পের ঘোষণার পক্ষে এটি যথাযথ ভিত্তি হতে পারে না বলে মনে হয়।

ACLU-এর একজন আইনজীবী নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, তারা বিশ্বাস করেন দুটি বিমানে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীরা রবিবার আকাশে ছিল। তবে বিবিসি এই তথ্য নিশ্চিত করতে পারেনি।

এ মামলা এখন যুক্তরাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হবে এবং শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারে।

ট্রাম্পের এই ঘোষণা এবং তা ঘিরে আইনি লড়াই তার সমর্থকদের আরও উজ্জীবিত করতে পারে। কারণ, অবৈধ অভিবাসন কঠোরভাবে দমন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছেন। জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দ্রুত মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন।

মানবাধিকার সংগঠন এবং কিছু আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনভাবে এই আইনের ব্যবহার নজিরবিহীন। অতীতে এটি তখনই প্রয়োগ করা হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সংবিধান অনুযায়ী, কংগ্রেসই কেবল যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।

ট্রাম্পের আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ১৪ বছর বয়সী বা তার বেশি বয়সী, যারা ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্য এবং যারা প্রকৃতপক্ষে নাগরিক বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাদের “গ্রেপ্তার, আটক, নিরাপত্তার জন্য আবদ্ধ এবং বহিষ্কার” করা হবে।

তবে ট্রাম্প এই ঘোষণায় পরিষ্কার করেননি কীভাবে মার্কিন কর্মকর্তারা নির্ধারণ করবেন যে কেউ এই সহিংস আন্তর্জাতিক গ্যাংয়ের সদস্য কিনা।

ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের পরামর্শদাতা ক্যাথরিন ইয়ন ইব্রাইট বলেন, অভিবাসন আইন অনুযায়ী গ্যাং সদস্যদের বহিষ্কারের “প্রচুর ক্ষমতা” থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প এই আইন ব্যবহার করতে চেয়েছেন, কারণ এতে কাউকে ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’র সদস্য প্রমাণ করার দরকার হবে না।

তিনি বলেন, “তিনি বিচারককে প্রমাণ দেখানো বা কাউকে গ্যাং সদস্য হিসেবে প্রমাণ করার প্রয়োজন এড়িয়ে গিয়ে ব্যাপকভাবে ভেনেজুয়েলানদের বংশগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আটক ও বহিষ্কারের সুযোগ চাচ্ছেন, যা অভিবাসন প্রক্রিয়ায় প্রমাণ করা সম্ভব হতো না।”

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%