পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে পাকিস্তানের অন্তত ২৪ স্থাপনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর হামলা, পারমাণবিক উত্তেজনার আশঙ্কা
জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে পাল্টা জবাবে দেশটির অন্তত নয়টি অঞ্চলের ২৪টি স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এসব হামলা চালানো হয়েছে মুজাফফরাবাদ, কোটলি, শিয়ালকোট, মোর, শাকারঘাট, এবং পূর্ব আহমেদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায়। এতে ক্রমেই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
ভারতের এই হামলার জবাবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ও একাধিক সামরিক স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আইএসপিআর জানিয়েছে, তারা অন্তত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
ভারতের হামলায় নিহতদের ‘রক্তের বদলা’ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ। বুধবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, “ভারত পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে একটি বড় ভুল করেছে। এর জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।” তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, “আমাদের সেনারা অসাধারণ দক্ষতা ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেছে।”
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সরাসরি পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি যদি আরো উত্তপ্ত হয়, তাহলে পারমাণবিক যুদ্ধ বাস্তব এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে।” একই সঙ্গে তিনি ভারতের রাজনৈতিক সংকটের দিক ইঙ্গিত করে বলেন, “ভারত অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে দৃষ্টি সরাতে সীমান্তে আগ্রাসন শুরু করেছে।”
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তবে আলোচনার বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। অন্যদিকে ভারতের হামলার প্রতিবাদে ইসলামাবাদ ও করাচিতে বিক্ষোভ হয়েছে। রাস্তায় নেমে হাজারো মানুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন। দেশটির গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই বৈঠকে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে পারে। একই দিনে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকও আহ্বান করা হয়েছে। এর আগে বুধবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নাগরিক প্রতিরক্ষা মহড়া অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিমান হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের সময় করণীয় শেখানো হয়েছে। পাশাপাশি চালানো হয় ব্ল্যাকআউট মহড়াও।
চলমান এই উত্তেজনার মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান উভয় পক্ষকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দুই দেশের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক আছে। উত্তেজনা নিরসনে আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত।”
সংঘাত ও প্রতিরোধের এই চরম পর্যায়ে ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি এখন আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কেন্দ্রে।
