আজ ২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবস

                   
২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবস
                 
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ মার্চ 25, 2025 4:16 পূর্বাহ্ন
                       
                           

আজ ২৫ শে মার্চ, একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমনের উদ্দেশ্যে যে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল, তা আজও দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এক গভীর ক্ষত হয়ে রয়ে গেছে। এই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতিবছর দেশব্যাপী পালন করা হয় গণহত্যা দিবস, যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ রাতের ভয়ানক সত্য।

ইতিহাসের ভয়াবহতা

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার রাস্তায় অগণিত নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ চালায়। রাতে, পাকিস্তানি সেনারা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের পরিকল্পিত আক্রমণ শুরু করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আন্দোলনকে দমন করা। এরই অংশ হিসেবে, সেনারা ধরপাকড়, গণধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যা চালিয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়, এবং অসংখ্য পরিবার তাদের প্রিয়জনদের হারিয়ে শোকাহত হয়।

গণহত্যার শিকার

এদিনে সারা দেশে গণহত্যার শিকার হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাধারণ জনগণ—সবাই এই হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। বিশেষত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছিলেন প্রধান লক্ষ্য। তৎকালীন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের ওপর চালানো হয়েছিল নির্মম অত্যাচার। রেহাই পায়নি নারীরাও, তাদের ওপর চালানো হয়েছিল গণধর্ষণ এবং শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নিন্দা

বিশ্ববাসী এই গণহত্যার নিন্দা জানালেও পাকিস্তান তখনকার সরকারের প্রতি কোনো জোরালো প্রতিবাদ জানায়নি। যদিও কিছু মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই ঘটনা প্রকাশ করেছিল, কিন্তু পাকিস্তান সরকার সেইসব প্রতিবেদনগুলোকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল।

২৫ শে মার্চের গুরুত্ব

আজকের দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশ স্বাধীনতার সংগ্রামে কত কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গেছে। সেই গণহত্যার পটভূমিতে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের জন্য গড়ে ওঠে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা ১৯৭১ সালে অর্জন করি স্বাধীনতা। তাই ২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবস, শুধু একটি শোকের দিন নয়, এটি আমাদের জাতীয় চেতনারও অংশ। এই দিনটি জাতি হিসেবে আমাদের একত্রিত হওয়ার এবং ইতিহাসের দিকে সজাগ দৃষ্টিতে তাকানোর সুযোগ করে দেয়।

স্মৃতিরক্ষার কার্যক্রম

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে দেশে নানা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, সেমিনার, প্রর্দশনী এবং প্রার্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এ ছাড়া, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটি এই দিনটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করে, তাদের সমর্থন ও প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে একে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পরিশেষ

আজ ২৫ শে মার্চ, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়, যখন পাক সেনারা নিষ্ঠুরভাবে দেশের মানুষকে হত্যা করে। এই দিনটি আমাদের শুধু শোক দেয় না, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও জাগ্রত করে। আমাদের অবশ্যই এই ইতিহাসকে ভুলে না গিয়ে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন কতটা ত্যাগ ও সংগ্রামের ফল।

                                             
0%
0%
0%
0%