মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুসহ চার শতাধিক রাজনীতিবিদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি

                   
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুসহ চার শতাধিক রাজনীতিবিদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বাতিল
                 
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশোধনঃ জুন 5, 2025 8:31 পূর্বাহ্ন
                       
                           

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)।

আট পাতার এই অধ্যাদেশে নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্রধারণ করে যুদ্ধ করা ব্যক্তিরাই কেবল বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

অন্যদিকে, মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়সহ আরও চারটি শ্রেণির ব্যক্তিকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে জারি করা এই অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, জামুকার ২০২২ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব রাজনীতিবিদ ও ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল, তাদেরকে এখন থেকে আর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য করা হবে না। বরং তারা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ, সীমানা অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং বিভিন্ন সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ নয়। তাই তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা না করে ‘সহযোগী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে উপদেষ্টা ফারুকি আজম জানান, যারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে স্বীকৃত হবেন, তারা একটি সনদ পাওয়ার অধিকার রাখবেন। যদিও পদবী পরিবর্তন হতে পারে, তবে তাঁদের মর্যাদায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, মুজিবনগর সরকার নিজে এবং তাদের দ্বারা গঠিত ও স্বীকৃত অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। অর্থাৎ, যারা সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে কাজ করেছেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পাবেন।

ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা বলেন,

“মুজিবনগর সরকারের মধ্যে যারা ছিলেন, যেমন—শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান, এমনকি খন্দকার মোশতাক আহমদ—তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।”

১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পর্যালোচনার পর এই পরিবর্তনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে এটি অধ্যাদেশ আকারে আইন মন্ত্রণালয় প্রকাশ করে।

নতুন এই অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের স্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি নতুন সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

                                             
0%
0%
0%
0%