নির্বাচনের নিরাপত্তায় বড় আয়োজন, মাঠে নামছে আট লাখ সদস্য
ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি, বডি ক্যামেরা—নির্বাচনে নজিরবিহীন প্রস্তুতি

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কমনওয়েলথ ইলেকটোরাল সাপোর্ট সেকশন (ইএসএস)–এর দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যাডভাইজার ন্যান্সি কানিয়াগো। তার সঙ্গে ছিলেন এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাডোনা লিঞ্চ। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
“নির্বাচনমুখী সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত”
সাক্ষাৎ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ নির্বাচনমুখী। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।”
তিনি জানান, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশব্যাপী প্রায় আট লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৮০ হাজার সদস্যও নির্বাচনী দায়িত্বে যুক্ত থাকবেন।
“প্রশিক্ষণ, মহড়া ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রস্তুত”
উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বিশেষ মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি জেলায় ‘নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ’ (Election Control Room) স্থাপন করা হবে, যা পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সম্ভব হলে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের জন্য বডি ওর্ন ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। এছাড়া পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েন থাকবে, যাতে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন।
গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে নির্বাচন
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “গণমাধ্যম কর্মীরা অবাধে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন। পাশাপাশি নির্বাচনী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক দলকে অনুমতি দেওয়া হবে।”
তিনি জানান, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মাঠে থাকবে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স।
কমনওয়েলথের প্রতিনিধি দলের প্রশংসা
বৈঠকে ন্যান্সি কানিয়াগো বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরপরই কমনওয়েলথের সদস্য হয়, যা দুই পক্ষের গভীর সম্পর্কের প্রতিফলন। বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানালে কমনওয়েলথ নির্বাচন পর্যবেক্ষক গ্রুপ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহী।”
তিনি আরও জানান, কমনওয়েলথ পুলিশ সদস্যদের মানবাধিকারভিত্তিক প্রশিক্ষণে সহায়তা দিতে আগ্রহী।
নতুন নিয়োগ ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা
নির্বাচন উপলক্ষে নতুন নিয়োগ সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ১০ হাজার ২৬৪ জন পুলিশ, ২ হাজার ১৪৫ জন আনসার ও ভিডিপি, ৫ হাজার ৫১৩ জন বিজিবি এবং ৬৩৪ জন কোস্টগার্ড সদস্য নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত অভিজ্ঞ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।”
কমনওয়েলথের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমরা কমনওয়েলথের কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সহযোগিতার চেয়ে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা প্রত্যাশা করছি। কমনওয়েলথ চাইলে আমাদের সিসিটিভি, বডি ওর্ন ক্যামেরা এবং অন্যান্য নির্বাচনী সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে।”
জুলাই হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশ্নের জবাবে
কমনওয়েলথ প্রতিনিধি জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “আইন মন্ত্রণালয় চাইলে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।”
জনগণ নির্ভয়ে ভোট দেবে—আশাবাদ উপদেষ্টার
বৈঠকের শেষাংশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমরা আশাবাদী—জনগণ নির্ভয়ে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং আনন্দমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।”
তথ্যসূত্র: বাসস
