২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ভোক্তাদের জন্য মিশ্র বার্তা: বাড়ছে বহু পণ্যের দাম, কিছু খাতে স্বস্তিও মিলবে

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ঘোষিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নানা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও ভিন্ন মাত্রা নিয়ে হাজির হয়েছে। ১৬ বছর পর সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে এই বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ পতনের পর রাজনৈতিক সরকার না থাকায়। মানুষের প্রত্যাশা যেমন ছিল অনেক, বাস্তবে তার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্য তৈরি হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
🔍 মূল দিকগুলো:
📈 যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে:
রড ও স্টিল: বাড়তি ভ্যাটের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর খরচ বাড়বে। ফলে নতুন করে বাড়ি নির্মাণ করতে আগ্রহীদের জন্য নেই ভালো খবর।
মার্বেল ও গ্রানাইট: ফিনিশিং সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়বে নির্মাণ ব্যয়।
এসি ও ফ্রিজ: গরমে স্বস্তির যন্ত্রপাতিতেও বাড়ছে ভ্যাট, ফলে এই ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম বাড়বে।
কসমেটিকস পণ্য: স্ত্রী বা প্রিয়জনকে খুশি করতে চাইলে এখন থেকে ব্যয় করতে হবে বেশি।
দেশীয় মোবাইল ফোন: দাম বাড়ার ফলে প্রযুক্তিপণ্য ক্রয়ে পড়বে প্রভাব।
বিদেশী চকলেট ও খেলনা: শিশুদের জন্য উপহার দিতে গেলে গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা।
মোটরসাইকেল ও ব্যাটারি চালিত রিকশা: দুটোরই দাম বাড়বে, ফলে যাতায়াতে খরচ বাড়বে।
হেলিকপ্টার: বিলাসবহুল এই যানবাহনেও আসছে মূল্যবৃদ্ধি।
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য, ব্লেড, টেবিলওয়্যার, দেশে তৈরি সুতা: ভোক্তা পণ্যে বেড়ে যাচ্ছে কর।
সিগারেট: আগের বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বাড়ছে সিগারেটের দাম।
📉 যেসব পণ্যের দাম কমছে:
সয়াবিন তেল ও চিনি: নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যে কিছুটা স্বস্তি মিলবে সাধারণ মানুষের।
মাটি ও পাতার তৈরি পণ্য: পরিবেশবান্ধব পণ্যে ভ্যাট কমানো হয়েছে।
এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার: ফলে বিদ্যুতের দাম না বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিলিন্ডার গ্যাস ও জ্বালানি তেল: দাম কমার কারণে জ্বালানির ওপর চাপ কিছুটা কমবে।
নিত্যপণ্যের ঋণপত্রে উৎসে কর হ্রাস: আমদানি ব্যয় কমে আসবে কিছুটা।
ভূমি নিবন্ধন খাতে কর হ্রাস: জমির কেনাবেচায় খরচ কমবে।
চামড়াশিল্পে শুল্ক ছাড়: দেশীয় শিল্পের জন্য এটি বড় সুবিধা।
বিদেশি জুস ও নিউজপ্রিন্ট: সংবাদপত্র খাত ও ভোক্তাদের জন্য সুখবর।
পিভিসি পাইপ ও কপার ওয়ার: নির্মাণ ও ইলেকট্রিক খাতে খরচ কমবে।
ক্রিকেট ব্যাট: শাস্ত্রীয় মূল্যে পাওয়া যাবে এই খেলাধুলার পণ্য।
📊 বাজেটের লক্ষ্য:
এই বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের সুষম বণ্টন এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন। কর কাঠামোতে কিছুটা পরিবর্তন এনে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তবে সাধারণ মানুষের ব্যয় কিছু ক্ষেত্রে বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও কিছু খাতে স্বস্তি মিলবে, তবে রড-স্টিল, কসমেটিকস, মোবাইল, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দাম বাড়ায় সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়তে পারে। আবার চিনি, সয়াবিন তেল ও জ্বালানি খাতে স্বস্তির সংবাদ কিছুটা ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সার্বিকভাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট একদিকে যেমন রাজস্ব বৃদ্ধির কৌশল গ্রহণ করেছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম স্বস্তিও নিশ্চিত করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। তবে বাস্তবায়নে দক্ষতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।