ভেদরগঞ্জে নসিমন উল্টে চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু —আর কত সোহাগের প্রাণ গেলে জ্বলবে এই সড়কে আলোর বাতি?

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে আবারো ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাস বোঝায় নসিমন উল্টে প্রাণ হারালেন সোহাগ মুন্সী নামের ৩৫বছর বয়সী এক পরিশ্রমী চালক। গতকাল শনিবার ১৮ ই অক্টোবর রাত একটার দিকে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার ডিমখালি ইউনিয়নের শরীয়তপুর টু চাঁদপুর মহাসড়কে ঘটে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা। গুরুতর আহত হয়েছেন হেল্পার জামানো (৩০)। এই দুর্ঘটনা এক মুহূর্তেই নিভিয়ে দিল এক পরিবারের সুখের প্রদীপ ভেঙে দিল এক মায়ের বুকের ভরসা স্তব্ধ করে দিল এক গ্রামের আকাশ।
সোহাগ মুন্সি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার উত্তর কেবলানগর গ্রামের কাশেম মুন্সির ছেলে। দরিদ্র পরিবারের বড় সন্তান তিনি। প্রতিদিন ভোরে ঘর ছাড়তেন জীবিকার খোঁজে। কিন্তু আর ফেরা হলো না।
স্থানীয়দের ভাষায়, রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে গাজীকান্দি থেকে বাঁশবোঝাই নসিমন চালিয়ে ফেরিঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন সোহাগ। হঠাৎ এক বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায় নসিমনটি। মুহূর্তের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে যায় সবকিছু। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সোহাগ আর সেখানে তিনি তার প্রাণ হারান। পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তার হেল্পার জামান।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। এক নিঃশ্বাসে সংসার টেনে নেওয়া সেই সোহাগের শরীরে তখন আর প্রাণ নেই।
সখিপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয়। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, “নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনাটি তদন্তাধীন।”
এদিকে স্থানীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ—গাজীকান্দি-কাসেমপুর সড়কটি যেন অন্ধকারে ঢাকা এক মৃত্যুফাঁদ। না আছে পর্যাপ্ত আলো, না কোনো সতর্কতা সংকেত। “রাতে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া মানে মৃত্যুর মুখে যাওয়া”—বলছেন এলাকাবাসী।
একটি রাত, একটি বাঁক, আর এক মুহূর্তের অন্ধকার—সবকিছু কেড়ে নিল এক জীবনের আলো। রেখে গেল স্ত্রীর চোখের পানি, মায়ের নিঃশব্দ আহাজারি, শিশুর প্রশ্ন—“বাবা কবে ফিরবে?”
ভেদরগঞ্জের আকাশে আজও ভাসছে সেই প্রশ্ন—
আর কত সোহাগের প্রাণ গেলে জ্বলবে এই সড়কে আলোর বাতি?
