কার্তুমে লুটপাট ও সহিংসতায় বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন: দুই বছর ধরে টিকে থাকা উসামার হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা

কার্তুমে লুটপাট ও সহিংসতায় বিপর্যস্ত নাগরিক জীবন: দুই বছর ধরে টিকে থাকা উসামার হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ মে 19, 2025 12:55 অপরাহ্ন

দীর্ঘ দুই বছর ধরে সুদানের রাজধানী কার্তুমে সহিংসতা ও গুলির শব্দের মধ্যেই বসবাস করে গেছেন উসাম জাদ করিম। সরকারি সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী [Rapid Support Forces (RSF)] (র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস) এর মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে তার আশপাশের অধিকাংশ মানুষ পালিয়ে গেলেও, তিনি থেকে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র নিজের সম্পত্তি রক্ষার তাগিদে।

উসাম জানান, তার বাসস্থান বুরি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নেয় RSF। এরপর একাধিকবার তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়।


“তারা আমাদের বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেয়, সবাইকে ড্রয়িং রুমের মধ্যে বসিয়ে রাখে প্রায় তিন ঘণ্টা। ঘরের প্রতিটি জিনিসপত্র উল্টে-পাল্টে তারা যা কিছু মূল্যবান মনে করেছে, এমনকি খাবার পর্যন্ত নিয়ে গেছে,”

বলেন উসাম।

তিনি আরও বলেন,


“তারা দিনে-রাতে বিভিন্ন সময়ে ফিরে ফিরে এসেছে। এমনকি আমাদের সন্তানদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাদের জিনিস কেড়ে নিয়েছে।”

এই ঘটনার পর উসাম পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, রাজধানীতে এ ধরণের হাজার হাজার গৃহলুটের অভিযোগ জমা পড়েছে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর RSF-এর দিকেই নির্দেশ করে।

তবে শুধু বাসা-বাড়িই নয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, এমনকি রাস্তার নিচে থাকা বিদ্যুতের কেবলও খুঁড়ে তুলে নেওয়া হয়েছে—শুধুমাত্র তামার জন্য। যারা রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ফেলে যাওয়া গাড়িও দখলে নেয় এই আধাসামরিক বাহিনী।

একটি সময়কার বৃহত্তম হাসপাতালগুলোর একটি, যা কার্তুমে অবস্থিত, সেটিও RSF-এর দখলে চলে যাওয়ার পর চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়।


“তারা আমাদের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি নিয়ে গেছে। এমনকি ল্যাবটিও লুট করেছে। এটা কোনো সাধারণ ডাকাতির কাজ নয়, বরং কারও পরিকল্পিতভাবে যন্ত্রপাতি খুলে নেওয়ার মতো দক্ষতা ছিল,”

জানান হাসপাতালটির এক চিকিৎসক।

এটি একমাত্র হাসপাতাল নয়, RSF নিয়ন্ত্রিত এলাকা গুলোর প্রায় সব হাসপাতালেই লুটপাট হয়েছে। কয়েক লাখ ডলারের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের গুদাম খালি হয়ে গেছে।

এছাড়াও সুদানের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ‘ব্যাংক অব কার্তুম’-এর ৫০টির বেশি শাখা ছিল রাজধানীতে। এখন চালু আছে মাত্র পাঁচটি।


“আমাদের ৯৫ শতাংশ শাখাই লুট ও ধ্বংসের শিকার। বিপুল পরিমাণ মুদ্রা চুরি হয়েছে, এমনকি নিরাপত্তা বাক্সে রাখা ব্যক্তিগত গহনা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসও নিয়ে গেছে,”

জানিয়েছেন ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা।

কার্তুম রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, ২৫ হাজারের বেশি লুট ও চুরির মামলা রেকর্ড করা হয়েছে, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে যেগুলো রিপোর্টই করা হয়নি।

বর্তমানে সেনাবাহিনী রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু যাদের ঘরবাড়ি লুট হয়ে গেছে, তাদের জন্য এই নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া মানেই হারানো সম্পদ ফিরে পাওয়া নয়। লুটপাটের ক্ষত আজও দগদগে হয়ে রয়েছে হাজারো মানুষের মনে।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%