সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে শনিবার অনুষ্ঠিত একটি বিশাল ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ—যা দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় সমাবেশ। এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আগাম নির্বাচন, স্বচ্ছ তদন্ত, এবং সরকারের প্রতি জনগণের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ।
১৬ জন নিহতের ট্র্যাজেডি থেকেই শুরু আন্দোলন
এই ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে, যখন সার্বিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর নভি সাদে একটি রেলস্টেশনের ছাদ ধসে পড়ে ১৬ জন নিহত হন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য জনগণ স্থবির প্রশাসনিক দুর্নীতিকেই দায়ী করে আসছে। তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ, মিছিল ও দেশব্যাপী প্রতিবাদ করে আসছে।
বেলগ্রেডের রাজপথে ‘আমরা নির্বাচন চাই’ স্লোগান
শনিবার সকাল থেকেই বেলগ্রেডের সবচেয়ে বড় স্কয়ারসহ আশপাশের রাস্তাগুলো জনস্রোতে ভরে যায়। স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘আর্কাইভ অব পাবলিক গ্যাদারিংস’ জানায়, এদিন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন—যা পুলিশের দাবি করা ৩৬ হাজারের চেয়েও বহুগুণ বেশি।
বিক্ষোভকারীরা সার্বিয়ান পতাকা হাতে, দেশের নানা শহরের নাম লেখা ব্যানার নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন, “আমরা নির্বাচন চাই!” — সরাসরি প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ভুচিচের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে।
প্রথমবার সংঘর্ষ: অশান্তির দায় কে নেবে?
এটি ছিল আন্দোলনের অন্যতম বড় সমাবেশ এবং প্রথমবারের মতো এখানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এএফপির সাংবাদিকরা জানান, পুলিশ রাবার বুলেট ও স্টান গ্রেনেড ছুঁড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে, আর বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ফ্লেয়ার ও পাথর নিক্ষেপ করে।
পুলিশ পরিচালক দ্রাগান ভাসিলিয়েভিচ বলেন, “পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয় বলেই লাঠিচার্জ করা হয়।” তবে তিনি অস্বীকার করেন যে ‘কেমিক্যাল এজেন্ট’ (টিয়ার গ্যাস) ব্যবহার করা হয়েছে। সংঘর্ষে ছয় পুলিশ সদস্য এবং দুই বিক্ষোভকারী আহত হন, এবং ডজনখানেক মানুষকে আটক করা হয়।
“আমরা থামবো না”: ছাত্রদের হুঁশিয়ারি
আইন বিভাগের ছাত্র স্টেফান ইভাকোভিচ বলেন,
“আমরা আবারও প্রমাণ করলাম—আমরা থামবো না। যতদিন না দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
আন্দোলনকারীরা সমাবেশ শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট ভুচিচকে শনিবার রাত ৯টার মধ্যে আগাম নির্বাচন ঘোষণা করার ‘চূড়ান্ত সময়সীমা’ বেঁধে দেন। তবে ভুচিচ আগেই তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বিক্ষোভ শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়,
“সরকারের হাতে সময় ছিল, উপায় ছিল। তারা তা না নিয়ে বরং দমন-পীড়ন আর হিংসার পথ বেছে নিয়েছে। এই উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্পূর্ণ দায় তাদের।”
“বিদেশি ষড়যন্ত্র” বলছে সরকার, প্রতিবাদ বলছে “গণদাবি”
সরকারি পক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ভুচিচ রোববার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (জিএমটি ৯টা) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তবে এই ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
ভুচিচ আগেও এই আন্দোলনকে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। বিক্ষোভের আগেই পাঁচজনকে “সরকার পতনের ষড়যন্ত্র” এর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে সার্বিয়ার উচ্চ আদালত।
ছাত্রদের হুঁশিয়ারি: দাবির বাস্তবায়ন না হলে আরও ‘র্যাডিকালাইজেশন’
বেলগ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভ্লাদান জোকিচ আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়ে বলেন,
“আমরা শুরু থেকেই ছাত্রদের পাশে ছিলাম, এবং পাশে থাকবো। এ পর্যন্ত তারা আটক, জেরা ও হামলার শিকার হয়েছে।”
ছাত্ররা আরও দাবি করেন, পার্লামেন্টের বাইরে প্রো-সরকারি ‘অভিযান শিবির’ (encampments) তুলে নিতে হবে। অন্যথায়, আন্দোলন আরও ‘র্যাডিকাল’ হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সরকার টিকে থাকলেও চাপে
নভি সাদের দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ হলেও শাসক দল সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি এখনো ক্ষমতায়। তবে সরকার রদবদল হয়েছে, এবং প্রেসিডেন্ট ভুচিচের প্রভাব আগের মতোই দৃঢ়।
এ মাসের শুরুতে স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধী জোটের সঙ্গে শাসক দলের প্রথম সংঘর্ষ ঘটে, যেখানে অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও শাসক দল অল্প ব্যবধানে জয় পায়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, যা ভুচিচ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।
🔻 মূল দাবি:
- আগাম নির্বাচন
- নভি সাদ ট্র্যাজেডির স্বচ্ছ তদন্ত
- দমন-পীড়ন বন্ধ
- প্রো-সরকার ক্যাম্প উঠিয়ে নেওয়া
📌 সাম্প্রতিক অগ্রগতি:
- সংঘর্ষে ৮ জন আহত, ডজনাধিক আটক
- আন্দোলন আরও বিস্তৃত ও তীব্র হচ্ছে
- প্রেসিডেন্ট ভুচিচের ভাষণের অপেক্ষা
📣 সার্বিয়ার রাজনীতিতে এক নতুন মোড়—যেখানে নেতৃত্বে উঠছে শিক্ষার্থীরা, আর রাজপথেই নির্ধারিত হতে পারে আগাম দিনের রাজনীতি।