উত্তর গাজায় সাহায্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ৬৭ জন

উত্তর গাজায় সাহায্য নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ৬৭ জন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুলাই 20, 2025 9:09 অপরাহ্ন

উত্তর গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘের ত্রাণ ট্রাকের জন্য অপেক্ষমাণ অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, তারা “তাৎক্ষণিক হুমকি” সরাতে “সতর্কতামূলক গুলি” চালায় এবং রিপোর্টকৃত মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গাজার অন্যান্য অংশেও ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় আরও ৬ জন নিহত হয়েছে এবং ১৫০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর।

শনিবার গাজায় চরম ক্ষুধা ও দুর্বলতার অবস্থায় প্রচুর মানুষের হাসপাতালে আসার কথা জানিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গত মে মাসের শেষ দিক থেকে প্রায় প্রতিদিনই খাদ্যের সন্ধানে বের হয়ে ফিলিস্তিনিদের নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। শনিবার দক্ষিণ গাজার দুটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে এমন দুটি ঘটনার কথা জানানো হয়।

বিতর্কিত মার্কিন ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন -এর অধীনে পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হয়, যেগুলো ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অবস্থিত। তবে কিছু হত্যাকাণ্ড জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণস্থলের কাছেও ঘটেছে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্য গাজার একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নাগরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ২১ মাসব্যাপী হামাসবিরোধী যুদ্ধে এই এলাকায় এখনো স্থল অভিযান চালায়নি সেনাবাহিনী।

রবিবার IDF জানায়, দেইর আল-বালাহ শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অবিলম্বে শহর ছেড়ে সাগর উপকূলবর্তী আল-মাওয়াসির দিকে চলে যেতে হবে।

এই সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ আসন্ন হামলার ইঙ্গিত দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ আতঙ্কে পড়েছে, এমনকি অনেক ইসরায়েলি জিম্মির পরিবারের সদস্যরাও শঙ্কিত—তাদের স্বজনদের ওই এলাকায় বন্দি করে রাখা হয়েছে কি না, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ঐ এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে, তবে এখনো স্থল বাহিনী মোতায়েন করেনি।

রবিবার দেইর আল-বালাহর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় আকাশ থেকে লিফলেট ফেলে সেখানকার মানুষকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সেনাবাহিনী জানায়, “শত্রুর ক্ষমতা এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংসে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জোরালোভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।” তবে এখনো পর্যন্ত ঐ অঞ্চলগুলোতে স্থল বাহিনী প্রবেশ করেনি বলেও জানানো হয়েছে।

দেইর আল-বালাহর এসব এলাকায় হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ তাবুতে বসবাস করছে।

ইসরায়েলি সামরিক সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, তারা মনে করে ঐ এলাকাগুলোতে হামাস জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে বলেই এখনো স্থল অভিযান চালানো হয়নি।

গাজায় এখনো অন্তত ৫০ জন জিম্মির মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলাকালে গাজার ২০ লাখের বেশি জনগণের প্রায় সবাই একাধিকবার স্থানচ্যুত হয়েছে। বারবার সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশে পুরো উপত্যকার বেশিরভাগ এলাকাই আক্রান্ত হয়েছে।

রবিবার, পোপ লিও ১৪তম গাজায় চলমান যুদ্ধকে “নৃশংসতা” আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে এর অবসান চেয়েছেন এবং “যথেচ্ছ বলপ্রয়োগ” থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তাঁর এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।

এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় মানুষ অনাহারে ভুগছে এবং জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন এক রক্তক্ষয়ী হামলার জবাবে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। ঐ হামলায় প্রায় ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং আরও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

এর জবাবে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৮,৮৯৫ জন মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই মন্ত্রণালয়ের তথ্যকেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচনা করে থাকে।

তথ্যসূত্র: Reuters

0%
0%
0%
0%