ইসরায়েলের হামলায় ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে বিস্ফোরণ, উভয়পক্ষে শতাধিক নিহত

                   
ইসরায়েলের হামলায় ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারে বিস্ফোরণ, উভয়পক্ষে শতাধিক নিহত
                 
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 17, 2025 10:24 পূর্বাহ্ন
                       
                           

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশেই বেড়েছে বেসামরিক প্রাণহানির সংখ্যা। সর্বশেষ ঘটনায়, ইসরায়েল ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালায় সরাসরি সম্প্রচারের সময়।

হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল তেহরানের সেই এলাকা, যেখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতাবাস, জাতিসংঘ সংস্থা এবং কূটনৈতিক মিশন অবস্থিত। এই এলাকাকে পূর্বেই সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ইসরায়েল।

ইরানের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে একাধিক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি হাসপাতালে চালানো হামলায় রোগী ও ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান এই হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” বলে উল্লেখ করেছে।

সোমবার ভোররাতে আবারও নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েল। তেহরানে সক্রিয় হয়ে ওঠে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২৮ জন ইরানি নিহত হয়েছেন এবং আরও ১,২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইরান। নিহতদের মধ্যে প্রায় ৭০ জন নারী ও শিশু রয়েছে।

ইসরায়েলের বিমানবাহিনী মাশহাদ বিমানবন্দরে হামলার দাবি করেছে, যা ইসরায়েল থেকে প্রায় ২,৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটিকে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া হামলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘপথে চালানো হামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

হামলার লক্ষ্যে ছিল ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা, সামরিক কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীদের বসতিও। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (IRGC)-এর গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজমি এবং তাঁর ডেপুটি হাসান মাক নিহত হয়েছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে, ইরানের প্রতিক্রিয়া আরও ‘সিদ্ধান্তমূলক ও ভয়াবহ’ হবে। তিনি বলেন, “ইসরায়েল সকল রেডলাইন অতিক্রম করেছে। গাজা ও লেবাননে যে মডেল প্রয়োগ করা হয়েছে, তেহরানেও একই কৌশল গ্রহণ করেছে তারা।”

ইরানের পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলের প্রধান বন্দরনগর হাইফায় চালানো হয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। শহরের একটি জ্বালানি কেন্দ্রের কাছে বিস্ফোরণ হয়। একইসঙ্গে ইসরায়েলি হামলার জবাবে ইরান বেশ কিছু ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনা এবং প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

তেল আবিবসহ দেশজুড়ে সক্রিয় হয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। বহু এলাকায় বাজে বিমান হামলার সাইরেন, নাগরিকদের আশ্রয়ে যেতে বলা হয়। যদিও ইসরায়েলের উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে, তবুও একাধিক ভবন ধ্বংস হয়েছে।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস দাবি করেছে, তারা এই দফায় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, যার ফলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।

ইসরায়েলের এই আকস্মিক আগ্রাসন শুরু হয় শুক্রবার। তেহরান বলছে, এই হামলা আন্তর্জাতিক, মানবিক এবং আইনি নিয়মনীতি সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে সংঘটিত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার শেষ কোথায়, তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। কেউ কেউ বলছেন, এটি শাসন পরিবর্তনের কৌশল, কেউ বলছেন পারমাণবিক কর্মসূচি ধীর করার প্রচেষ্টা।

তবে স্পষ্ট একটি বিষয়—এই সংঘাতের কারণে দুই দেশের সাধারণ মানুষকেই দিতে হচ্ছে সবচেয়ে বড় মাশুল।

                           

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি

                 
0%
0%
0%
0%