ইসরায়েলের বিভাজন প্রাচীর নির্মাণে ধ্বংস হচ্ছে ফিলিস্তিনের কৃষিজমি, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে সিঞ্জিলের গাফরি পরিবার

দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বিভাজন প্রাচীর নির্মাণের ফলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের সবুজ পাহাড়ি প্রান্তর ও শত শত বছরের পুরোনো জলপাই খেত। আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মাসের পর মাস ধরে রামাল্লার কাছে সিঞ্জিল এলাকায় কৃষিজমি গুঁড়িয়ে এই প্রাচীর নির্মাণ করছে।
প্রাচীরটি গাফরি পরিবারের বাড়িকে আশপাশের ফিলিস্তিনি শহর ও জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। ইসরায়েলি পক্ষ বলছে, এটি নির্মাণ করা হচ্ছে এমন একটি সড়কের নিরাপত্তার স্বার্থে, যেটি পশ্চিম তীরজুড়ে ইসরায়েলি বসতিগুলোর সংযোগস্থল। ইসরায়েলের দাবি—ফিলিস্তিনি কিশোরদের পাথর ছোঁড়া ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ।
তবে গাফরি পরিবারের সদস্যদের মতে, এই অভিযোগ “অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য”। পরিবারটির একজন বলেন, “আমি সিঞ্জিলেই জন্মেছি ও বড় হয়েছি। এখনো কারও পাথর নিক্ষেপ করতে দেখিনি। কেউ এত ঝুঁকি নিয়ে খোলা জায়গায় এসে সেনা টহলের মধ্যে পাথর ছোঁড়ে না।”
পরিবারটি আরও জানায়, একদিকে বিভাজন প্রাচীর, অন্যদিকে সামরিক সড়কের মাঝখানে পড়ে তাদের ঘরবাড়ি কার্যত একটি বন্দিশালায় পরিণত হয়েছে। বহুবার তারা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি নিয়মিত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তল্লাশির শিকারও হন তারা। মার্কিন নাগরিকত্বধারী এই পরিবারটি বারবার আমেরিকান দূতাবাসের সহায়তা চেয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি। এক সদস্য প্রশ্ন রাখেন, “আমাদের সুরক্ষায় আর কী ঘটতে হবে?”
আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাচীরটি শুধু একটি বাড়ি নয়, পুরো সিঞ্জিল শহরকেই বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এতে জমির মালিকেরা তাদের নিজস্ব খেতখামারে যেতে পারবেন না, যার ফলে তাদের জীবন-জীবিকা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। এক বছর আগে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ ৩৫,০০০ বর্গমিটার জমি দখল করে নেয়।
স্থানীয়রা বলছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও বসতি স্থাপনকারীরা সিঞ্জিলকে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখার পাঁয়তারা করছে। গত মাসেই ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দখলকৃত পশ্চিম তীরে সেনা অভিযানের পাশাপাশি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব হামলা ইসরায়েলি সেনাদের চোখের সামনে ঘটছে। “তারা বসতি স্থাপনকারীদের হামলার সময় পর্যাপ্ত সময় দেয়, আবার হামলার পর নিরাপদে সরে যাওয়ার পথও করে দেয়।”
প্রাচীর নির্মাণের কারণে প্রায় ৮,০০০ ফিলিস্তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন অবৈধ হলেও, দেশটির সরকার এসব কর্মকাণ্ডকে উল্টো উৎসাহ দিচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, এই প্রাচীর নির্মাণ আরও জমি দখলের একটি নতুন কৌশল মাত্র।