যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়ছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি

ফোর্থ পরমাণু প্রকল্পের স্যাটেলাইট চিত্র
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 23, 2025 4:09 অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, এই হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপরিভাগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যদিও ভূগর্ভস্থ কাঠামোগুলোর অবস্থান এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থাপনাগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত ফোর্দ পারমাণবিক কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের বাংকার-বাস্টার বোমার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। অন্তত দুটি বোমার আঘাতে কেন্দ্রটির দুই থেকে ছয়টি স্থানে বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি, ওই এলাকার একটি এয়ার ডিফেন্স সাইটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা ও সিএনএন।

অন্যদিকে, নাতানস পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় তুলনামূলক কম ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সিএনএন’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখানে মার্কিন হামলায় গঠিত হয়েছে দুইটি বড় ক্রেটার, যার একটি প্রায় সাড়ে পাঁচ মিটার এবং অপরটি তিন মিটার প্রশস্ত। তবে এসব ক্ষতির প্রভাব স্থাপনাটির গভীরে থাকা ভূগর্ভস্থ কাঠামোর ওপর কতটা পড়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। নাতানস কেন্দ্রটি এতটাই গভীরে নির্মিত যে স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে তা নির্ভুলভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির চিত্র পাওয়া গেছে ইরানের অন্যতম বৃহৎ পারমাণবিক কেন্দ্র ইস্ফাহানে। এখানে কমপক্ষে আঠারোটি কাঠামো ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে সিএনএন। এমনকি এর নিকটবর্তী একাধিক টানেল পুরোপুরি ধসে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব টানেলে ইরান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সংরক্ষণ করতো।

হামলার পর দেওয়া এক ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের প্রায় সব পারমাণবিক স্থাপনাতেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে এক “চূড়ান্ত আঘাত”। তবে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা শুরু হওয়ার পরপরই পারমাণবিক স্থাপনাগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি সরিয়ে নেওয়া হয়, ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সীমিত রাখা গেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যাটেলাইট চিত্রের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, বিশেষ করে ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে। এসব কাঠামোর প্রকৃত অবস্থা জানতে আরও সময় ও ভৌগোলিক তদন্ত প্রয়োজন।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলে এই হামলা নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আরও বেড়েছে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, সি এন এন

0%
0%
0%
0%