ইসরাইলে হামলার পর আলোচনায় ইরানের ‘সিজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্র: কোরআনি শব্দ থেকে নামকরণ, অদ্ভুত গতি ও ধ্বংসক্ষমতা চমকে দিচ্ছে বিশ্বকে

                   
ইসরাইলে হামলার পর আলোচনায় ইরানের ‘সিজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্র: কোরআনি শব্দ থেকে নামকরণ, অদ্ভুত গতি ও ধ্বংসক্ষমতা চমকে দিচ্ছে বিশ্বকে
                 
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 20, 2025 1:40 অপরাহ্ন
                       
                           

ইসরাইলে সাম্প্রতিক হামলার পর নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে ইরানের অন্যতম বিধ্বংসী অস্ত্র—‘সিজ্জিল’ ক্ষেপণাস্ত্র। পবিত্র কোরআনের সূরা ফিল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নামকরণ করা হয়েছে। ওই সূরায় বর্ণিত আছে কাবা ধ্বংসে আসা আব্রাহার হস্তিবাহিনীকে ‘আবাবিল’ পাখির ছোড়া পাথরের মাধ্যমে ধ্বংসের ঘটনা। সেই পাথরগুলোকেই বলা হয়েছে “সিজ্জিল”। এই কোরআনিক প্রতীকের নামেই ইরান তাদের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের নাম রেখেছে ‘সিজ্জিল’।

দ্রুতগামী ও ধোঁকাবাজ বৈশিষ্ট্যের এই মিসাইল প্রথম আলোচনায় আসে ইসরাইলে ইরানের সাম্প্রতিক বড় ধরনের সামরিক অভিযানের সময়। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিজেই ঘোষণা দেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান শুরু করেছে তেহরান। এই অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরাইলি ভূখণ্ডে ছোড়া হয় বহুল আলোচিত সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র।

ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এই ক্ষেপণাস্ত্রটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এটি উৎক্ষেপণের পর দুটি ধাপে গতি পরিবর্তন করে। এতে সলিড ফুয়েল (দ্রবীভূত না হওয়া কঠিন জ্বালানি) ব্যবহার করায় খুব দ্রুতই উৎক্ষেপণ সম্ভব হয় এবং গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ফলে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বুঝে ওঠার আগেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এটি।

প্রায় ১৮ মিটার দৈর্ঘ্যের সিজ্জিল মিসাইলটি ৭০০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহনে সক্ষম এবং এর সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যসহ আশপাশের বহু গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সামরিক ঘাঁটিতে সহজেই আঘাত হানা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র রাডার ও শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে পারদর্শী, যার ফলে এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক অস্ত্র হিসেবে ইরানের হাতে শক্তিশালী প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও যেখানে দেখা যায়, এক অদ্ভুত গতিবিধিতে, সাপের ফনার মতো আকৃতি নিয়ে লক্ষ্যবস্তুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একটি মিসাইল। ব্যবহারকারীরা বলছেন, এটিই সিজ্জিল মিসাইলের ভিডিও। মিসাইলের এমন গতিবিধি দেখে অনেকেই একে ‘মরণ-ফনা’ আখ্যা দিচ্ছেন।

সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্রের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৯০ দশকের শেষ দিকে ইরান এই প্রকল্পের সূচনা করে। এটি মূলত ইরানের স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ‘জিলজাল’ কর্মসূচির ভিত্তিতে নির্মিত হলেও পরে এতে যুক্ত হয় উন্নত প্রযুক্তি ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষমতা।

বিশ্লেষকদের মতে, সিজ্জিলের মতো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ইরান একটি কৌশলগত বার্তা দিচ্ছে, বিশেষত ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিপক্ষের প্রতি। একদিকে এটি ইসলামী ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে, অন্যদিকে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে এর কার্যকারিতা সন্দেহাতীতভাবে বিশ্ববাসীকে চমকে দিচ্ছে।

ইরান বলছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে তাদের সামরিক সক্ষমতা এক ধাপে বহুগুণ বেড়ে গেছে। তবে একইসাথে, এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে—বিশেষ করে যখন ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সিজ্জিলের মতো ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার শুধু যুদ্ধের ভারসাম্যই বদলে দিতে পারে না, বরং পুরো অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও আরও জটিল করে তুলতে পারে।

                                             
0%
0%
0%
0%