ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের অষ্টম দিনে আতঙ্কে ইরান ছাড়ছেন বহু মানুষ, আশ্রয় নিচ্ছেন প্রতিবেশী আর্মেনিয়ায়

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের অষ্টম দিনে আতঙ্কে ইরান ছাড়ছেন বহু মানুষ, আশ্রয় নিচ্ছেন প্রতিবেশী আর্মেনিয়ায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 20, 2025 10:15 অপরাহ্ন

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের অষ্টম দিনে এসে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। ইরানের বিভিন্ন শহরে বোমা হামলার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন। অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন প্রতিবেশী দেশ আর্মেনিয়ায়। ইরান-আর্মেনিয়া সীমান্তের আগারাক ক্রসিং পয়েন্ট এখন হয়ে উঠেছে উত্তপ্ত এক মরুভূমির দৃশ্য। চারপাশে ধুলোবালি আর শুকনো, পাথুরে পাহাড়—গাছপালা নেই, ছায়া নেই। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা মানুষদের জন্য একেবারেই স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নয় এটি।

এক নারীর মাথার নিচের অংশ কামানো, হাতে শিশু সন্তান; আর তার স্বামী ট্যাক্সিচালকদের সঙ্গে ভাড়ার দরদাম করছেন। আরেক দম্পতি, যাদের ছোট একটি ছেলে রয়েছে, ফিরে যাচ্ছেন অস্ট্রিয়ায়, যেখানে তারা বসবাস করেন। সীমান্ত দিয়ে যাঁরা প্রবেশ করছেন, তাদের অনেকেই ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া বা অন্য কোনো দেশে বাস করেন কিংবা সেসব দেশের নাগরিক।

তাদের অনেকেই ইসরায়েল-ইরান চলমান যুদ্ধের কারণে ইরান ছাড়ছেন।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজ থেকে আসা এক ব্যক্তি বললেন,
“আজকে আমি এক জায়গা দেখেছি যেখানে বোমা পড়েছে। সবাই ভয় পাচ্ছে, সব জায়গাই বিপজ্জনক হয়ে গেছে, এটা স্বাভাবিক না,”— বললেন তিনি, একটি ভ্যানের পাশে ছোট ছেলেকে পাশে দাঁড় করিয়ে।

১৩ জুন শুরু হওয়া সংঘাতে ইসরায়েল প্রথমে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ জনবসতি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি (HRANA) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরানে ৬৫৭ জন নিহত হয়েছে। পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়।

ইসরায়েল দাবি করেছে তারা এখন তেহরানের আকাশসীমায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং রাজধানীর কিছু জেলা খালি করার জন্য বাসিন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে। ফলে তেহরান ছাড়ার পথে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন মানুষ।

তেহরান থেকে গাড়িতে করে ১২ ঘণ্টা যাত্রা করে আসা কয়েকজন জানালেন, তারা সরাসরি হামলা না দেখলেও বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।

এক তরুণ আফগান যুবক, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, জানালেন,
“সেখানে অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিরাতে ইসরায়েলের হামলা হয়। আমি খুব কষ্ট করে তেহরান থেকে পালিয়ে এসেছি। কোনো ফ্লাইট ছিল না, আর কোনো উপায়ও ছিল না।”

তিনি আরও বলেন,
“যাদের যাওয়ার জায়গা আছে, তারা এখন তেহরান ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিরাতে হামলা হয়, মানুষ ঘুমাতে পারে না। খুব বাজে অবস্থা।”

এক যুবতী, যিনি সাদা হিজাব পরে এবং চোখে মোটা নকল পাপড়ি লাগিয়েছিলেন, জানালেন তিনি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন,
“আমি এমন কিছু দেখেছি যেটা বলা খুব কষ্টকর। আমি বলতে চাই না। কেউ যদি আপনার দেশ আক্রমণ করে, তখন আপনি কি স্বাভাবিক থাকতে পারবেন?”

ইসরায়েলের কিছু মন্ত্রী বলছেন, এই সংঘাতের ফলে ইরানে সরকার পতনও ঘটতে পারে।

তবে জাভাদ নামে এক ইরানি, যিনি গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে সাবজেভারে এসেছিলেন এবং এখন জার্মানিতে ফিরছেন, তিনি বললেন,
“ইসরায়েলের কোনো সুযোগ নেই। ইসরায়েল আমাদের বন্ধু না, শত্রু। ওরা আমাদের বাড়িতে এসে সাহায্য করতে পারে না। ওদের নিজেদের বদলানো দরকার, আমাদের না।”

তবে সীমান্তে দেখা গেছে, কেউ কেউ উল্টো দিকেও—অর্থাৎ ইরানেও ফিরে যাচ্ছেন।

আগের রাতেই আর্মেনিয়ায় পরিবারসহ ছুটি কাটিয়ে ফেরা আলি আনসায়ে নামে এক ব্যক্তি বললেন,
“আমার কোনো ভয় নেই, আমি মোটেই আতঙ্কিত না। যদি আমার মৃত্যু লেখা থাকে, তাহলে নিজের দেশেই মরব।”

তিনি আরও বলেন,
“ইসরায়েল গোটা দুনিয়াকে হেনস্থা করছে—গাজা, লেবানন, সব জায়গায়। এত ছোট একটি দেশ কিভাবে পারমাণবিক অস্ত্র রাখে?”

“কোন আইনের ভিত্তিতে ইসরায়েল বোমা রাখবে, আর ইরান, যেটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি নিয়ে কাজ করছে, সে পারবে না?”

উল্লেখ্য, ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র থাকার বিষয়টি কখনো স্বীকারও করেনি, অস্বীকারও করেনি। তবে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়—দেশটির কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইরান ছেড়ে পালাচ্ছেন বহু মানুষ, আবার কেউ কেউ সাহস নিয়ে ফিরেও যাচ্ছেন। তবে ভবিষ্যৎ কী, তা এখনও অনিশ্চিত।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

0%
0%
0%
0%