“মেশিন ওয়েবে” পা রাখতে যাচ্ছে ইন্টারনেট: গুগলের নতুন এআই মোডের প্রতিক্রিয়া

গুগল সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তাদের সার্চ ইঞ্জিনে যুক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত মোড, যা ইন্টারনেটের স্বরূপই পাল্টে দিতে পারে। অনেকে তাই বলছেন, মেশিন ওয়েবের এ আগমন পুরনো ওয়েবের অবসান বয়ে আনবে। যদিও কেউ কেউ আশাবাদী, মনে করছেন এ বদল ইউজারদের জন্য আরও সমৃদ্ধ হবে, নতুন সুযোগের জন্ম দেবে। তবে যতই হোক, আমাদের অনলাইন অভিজ্ঞতা আর আগের মতো থাকবে না—এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে নতুন দুনিয়ার জন্য।
পুরনো চুক্তির ধেলক
ইন্টারনেট কিংবা “ওয়েব” গ্রস্থ ছিল এক সরল বিনিয়োগ-বিনিময়ের ওপর: ওয়েবসাইটগুলো তাদের কন্টেন্ট বিনামূল্যে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনকে সরবরাহ করতো, বিনিময়ে সার্চ ইঞ্জিন পাঠাতো পাঠককে সেই ওয়েবসাইটে—যেখানে তারা বিজ্ঞাপন দেখতো, কেনাকাটা করতো। এভাবেই হাজারো সাইট-ই উপার্জন করেছে।
বর্ষ দশেক ধরে এই চুক্তি অটুট থাকলেও, ইদানীং এক সামান্য পরিবর্তনই অনেকে ভাবছেন সমগ্র ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এআই মোড—একটি নতুন অধ্যায়
২০ মে, ২০২৫-এর দিন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই ঘোষণা করেন, “যারা চান পুরো অনুসন্ধানই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে, তাদের জন্য আমরা আনছি ‘এআই মোড’—সার্চের এক নতুন দিগন্ত।” এটি অ্যাপ ও ওয়েব আর ঠিক তালিকাভিত্তিক লিঙ্ক দেখাবে না; বরং চ্যাটবটের মতো আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন এআই, এক ধরনের সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ রূপে।
প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে সব ব্যবহারকারীর জন্য অপশন হিসেবে চালু হয়েছে এআই মোড, ধাপে ধাপে তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। গুগলের অনুসন্ধান প্রধান জানিয়েছেন, “এটাই গুগল সার্চের ভবিষ্যৎ।”
প্রকাশকদের দুশ্চিন্তা
অনেক প্রকাশকই ভাবছেন, এ পরিবর্তন তাদের জীবিকাই বিলীন করে দেবে।
- লিলি রে, ছিলেন বলেছেন: “যদি এআই মোড ডিফল্ট হয়, তা হলে ওয়েবসাইটগুলোর মূল আয় উৎস হারবে, অনর্গানিক ট্র্যাফিক ব্যবহার হারাবে।”
- বিপরীতে গুগল বলছে: “আমরা প্রতিদিন কোটি কোটি ক্লিক পাঠাই ওয়েবসাইটে, নতুন প্রযুক্তি মানুষকে আরও গভীর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে উদ্বুদ্ধ করবে, নতুন কন্টেন্ট আবিষ্কারের সুযোগ করে দেবে।”
“ওপেন ওয়েব” কি রক্ষা পাবে?
স্বাধীন, ফ্রিতে যেকোনো পাঠকের প্রবেশমুক্ত “ওপেন ওয়েব” অনেকে মনে করছেন বিপন্ন—এখন থেকে মানুষ তথ্য খোঁজার আগে মধ্যেই উত্তর পেয়ে দেবে এআই, দেরি করবে না কোনো সাইটে ক্লিক। বিশ্লেষণ বলছে, ইতোমধ্যেই গুগল সার্চের প্রায় ছয়েকটি খুঁজিতে কেউই আর ক্লিক করছেন না—সোজা উত্তর খুঁজেই ফিরে যাচ্ছেন। যদি এআই মোড চালু হয়, সেই হার আরও বাড়তে পারে।
বারি অ্যাডামস বললেন, “এখানে ‘লুপ্তি’ শব্দটা ছোট, ‘নাশন’ হবে সঠিক ব্যাখ্যা।”
গিসেলে নাভারো মন্তব্য করলেন, “ওয়েব হল আমাদের লাইব্রেরি—এখন হয়তো শুধু বইয়ের নাম শুনে চলে যাব, বই হাতে নিতে আর হবে না।”
“মেশিন ওয়েব” কি?
“মেশিন ওয়েব” বলতে এমন এক যুগকে বোঝানো হচ্ছে, যেখানে সাইটগুলো মানুষের জন্য নয়, এআই-এর জন্য লেখা হবে, সারমর্ম-ভিত্তিক উত্তরই মুখ্য।
ডেমিস হাসবিস জানিয়েছেন, “কয়েক বছরে অনেক বদলে যাবে; প্রকাশকরা সরাসরি এআই-কে তথ্য পাঠাবেন, মানুষ ওয়েব পেজে যাওয়ার প্রয়োজনই অনুভব করবেন না।”
ম্যাথু প্রিন্স অ্যালার্ম দিচ্ছেন, “রোবট ক্লিক করে না—এআই যদি প্রধান শ্রোতা, তাহলে স্রষ্টারা কীভাবে আয় করবে?”
নতুন পথের সন্ধান
কিছু প্রকাশক বলছেন, একসঙ্গে য়ার সুরক্ষা করতে হবে: এক ব্লকচেইন পদ্ধতি, অথবা এআই ক্রলারদের কাছে অর্থ দিয়ে তথ্য শেয়ার—নতুন ব্যবসায়িক মডেল খুঁজে বের করতে হবে। সামাজিক মাধ্যমের দিকে ঝুঁকতে হতে পারে, অথবা অন্য সার্চ প্ল্যাটফর্মে অন্বেষণ।
ড্যানিয়েলি কফি, নিউজ/মিডিয়া অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট, বলেন, “এটা অপারগ ডাকি—মূল পণ্যই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আমরা কোনো পারিশ্রমিক পাচ্ছি না।”
পুরনো বিনিময়-বিন্যাসের এই আকূলতা নতুন রূপ নিচ্ছে। কেউ বলছে, “আগের মতো দিন আর ফিরবে না।” কেউ আবার আশার পক্ষে—বলেন, “পরিবর্তন অটুট, তবে নতুন ধারণা বদলে দিতে পারে ছবিটা।”
অবশ্য, সবই নির্ভর করছে ব্যবহারকারীর পছন্দে—আপনি চাইবেন নাকি সারমাঠেই উত্তর পেতে, নাকি ক্লিক করে নিজের মতো পড়তে। যাই হোক, “মেশিন ওয়েব” আজকের ওয়েবের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে যাচ্ছে।