জ্বর হলে কি করবেন?

                   
জ্বরে আক্রান্ত একজন রোগী মাথায় পানি পট্টি এবং জন্মাপার জন্য থার্মোমিটার মুখে দিয়েছে এমন ছবি
                 
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 18, 2025 9:29 অপরাহ্ন
                       
                           

জ্বর হল শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার (৯৭°F থেকে ৯৯°F বা ৩৬.১°C থেকে ৩৭.২°C) চেয়ে বেশি তাপমাত্রা, যা আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হলে দেখা দেয়। এটি নিজেই কোনো রোগ নয়, বরং শরীরে রোগ বা সংক্রমণ হচ্ছে তার একটি লক্ষণ।

একটি উদাহরণ চিন্তা করুন – আপনি যদি কাঁটায় পা দেন, সেখানে ইনফেকশন হলে শরীর নিজে সেই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে। এই লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। এটিই জ্বর।


🔍 জ্বর হওয়ার প্রধান কারণগুলো কী কী?

১. ভাইরাল সংক্রমণ (Viral Infection)

  • সাধারণ সর্দি-কাশি
  • ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu)
  • করোনা ভাইরাস
  • ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া

২. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Infection)

  • টনসিল ইনফেকশন
  • ইউরিন ইনফেকশন (UTI)
  • টাইফয়েড জ্বর
  • ফুসফুসের ইনফেকশন (Pneumonia)

৩. পরজীবী সংক্রমণ

  • ম্যালেরিয়া
  • অ্যামোইবিক ডিজেন্ট্রি

৪. অন্যান্য

  • গাঁটে ব্যথা বা ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ
  • টিউমার বা ক্যান্সার
  • শিশুদের টিকা নেয়ার পর জ্বর

🧭 জ্বরের উপসর্গগুলো কীভাবে চিনবেন?

জ্বরের সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:

  • শরীর কাপুনি দিয়ে ঠান্ডা লাগা
  • মাথাব্যথা
  • চোখে ব্যথা বা জ্বালা
  • গায়ে ব্যথা, বিশেষ করে মাংসপেশীতে
  • দুর্বল লাগা
  • অতিরিক্ত ঘাম
  • খাবারে অনীহা
  • শিশুদের ক্ষেত্রে কান্নাকাটি ও খাওয়ার অনীহা

⚠️ যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে কারো জ্বরের সঙ্গে চোখে রক্ত জমে গেছে, গায়ে র‍্যাশ উঠছে বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হচ্ছে—তাহলে তা গুরুতর হতে পারে।


জ্বর হলে ঘরোয়া করণীয় (Home Remedies):

১. 🛏️ শরীরকে বিশ্রাম দিন

জ্বর মানেই শরীর যুদ্ধ করছে। কাজ, দৌড়ঝাঁপ নয়—চুপচাপ বিছানায় বিশ্রাম নিন।

২. 💧 পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন

জ্বর হলে ঘাম বেশি হয়, ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই:

  • বিশুদ্ধ পানি
  • ডাবের পানি
  • ওআরএস
  • স্যুপ, জাউ, ভাতের মাড়
    খেতে থাকুন প্রতি ঘণ্টায় একটু একটু করে।

৩. 🌬️ শরীর ঠান্ডা রাখুন

  • হালকা পাতলা জামা পরুন
  • কপালে ঠান্ডা পানি ভেজানো তোয়ালে দিন
  • গরম পানি বা বরফ নয়, শুধু ঠান্ডা পানি (ঘরের তাপমাত্রার) ব্যবহার করুন
  • ঘর যেন সুনিশ্চিতভাবে বায়ু চলাচলপূর্ণ হয়

৪. 🍽️ হালকা খাবার খান

  • নরম ভাত, খিচুড়ি, স্যুপ
  • ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন

💊 কোন ওষুধ খাবেন?

🔹 Paracetamol

  • সবচেয়ে নিরাপদ
  • প্রাপ্তবয়স্ক: ৫০০ – ১০০০ মি.গ্রা. (প্রয়োজনে ৬ ঘণ্টা পর)
  • শিশু: ওজন অনুযায়ী ডোজ (প্রতি কেজিতে ১৫ মি.গ্রা.)
  • খালি পেটে নয় – হালকা খাবারের পর খাওয়া উত্তম

🔹 Ibuprofen

  • শরীর ব্যথা থাকলে কার্যকর
  • তবে পেটের সমস্যা থাকলে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে
  • ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়াই ভালো

🚫 অ্যান্টিবায়োটিক: নিজে থেকে খাবেন না। শুধুমাত্র যদি সংক্রমণ নিশ্চিত হয় এবং ডাক্তার বলেন তবেই খাবেন।


🚨 যেসব ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা প্রয়োজন:

  1. জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়
  2. ১০২°F এর বেশি হয় ও কমে না
  3. জ্বরের সঙ্গে অজ্ঞান হওয়া, খিচুনি, কথা জড়িয়ে যাওয়া
  4. চোখ লাল বা ফোলা, র‍্যাশ বা রক্তপাত দেখা দিলে
  5. বাচ্চারা খেতে না চাইলে, একটানা ঘুমালে বা কাঁদলেও সাড়া না দিলে

👨‍⚕️ ডাক্তার দেখানো উচিত কোন অবস্থায়?

উপসর্গকোন ডাক্তার
সাধারণ ভাইরাল জ্বরমেডিসিন স্পেশালিস্ট
শিশুদের জ্বরশিশু বিশেষজ্ঞ (Pediatrician)
ডেঙ্গু, টাইফয়েড সন্দেহইনফেকশন রোগ বিশেষজ্ঞ
চোখ লাল বা ফোলা, র‍্যাশচর্মরোগ ও মেডিসিন

🛑 জ্বর হলে যা করবেন না:

  • গরম কাপড়ে পুরো শরীর মুড়িয়ে ফেলা
  • গুজব শোনা ও নিজের মতো করে ওষুধ খাওয়া
  • বারবার প্যারাসিটামল খাওয়া
  • শিশুর ক্ষেত্রে বড়দের ওষুধ দেওয়া
  • পানি ও খাবার বন্ধ করে রাখা

জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি লক্ষণ—শরীরে অন্য কিছু ঘটছে তার ইঙ্গিত। অনেক সময় ঘরোয়া চিকিৎসা ও বিশ্রামেই জ্বর ভালো হয়ে যায়, আবার কখনো এটি হতে পারে গুরুতর কোনো রোগের সংকেত। তাই সাবধান হোন, নিজের শরীরের দিকে মনোযোগ দিন, এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


                                             
সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%