বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার ভিত্তি: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার ভিত্তি: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 29, 2025 10:55 পূর্বাহ্ন

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ কেবল পরিবেশগত গুরুত্বের জন্যই নয়, বরং অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্যও অপরিহার্য।”

আজ রাজধানীর বন অধিদপ্তর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় বন জরিপ ও একীভূত বন ব্যবস্থাপনায় কর্মশালা

‘বাংলাদেশের জাতীয় বন জরিপের দ্বিতীয় চক্রের কর্মশালা’ এবং ‘ভূপ্রকৃতি, ভূমি ব্যবহার ও প্রাকৃতিক মূলধনের মানচিত্র এবং একীভূত অংশীদারিত্বভিত্তিক বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়নের জাতীয় যাচাই কর্মশালা’ শীর্ষক এই কর্মশালায় বন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

কার্বন ট্রেড নয়, বনকে দেখুন অক্সিজেন ও জীববৈচিত্র্যের উৎস হিসেবে

রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বনকে শুধুমাত্র কার্বন ট্রেডিংয়ের চোখে দেখলে হবে না। বন হলো জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল এবং আমাদের অক্সিজেন সরবরাহকারী অন্যতম প্রধান উৎস।”

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “উন্নত দেশগুলো যদি নিজেদের নিঃসরণ না কমিয়ে কেবল কার্বন ক্রেডিট কেনার মাধ্যমে দায়সারা করতে থাকে, তাহলে বৈশ্বিক জলবায়ু সংকট কখনই সমাধান হবে না।”

বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও জনগণকেন্দ্রিক বন ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন

উপদেষ্টা বলেন, “বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সকল অংশীজনের অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি। degraded বা ক্ষতিগ্রস্ত বন পুনরুদ্ধার করতে হবে, জনগণের অংশগ্রহণে ব্যবস্থাপনার মডেল বাস্তবায়ন করতে হবে এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “SUFAL (Sustainable Forests and Livelihoods) প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং এর ফলাফল যাচাই করতে হবে।”

তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব

রিজওয়ানা হাসান বলেন, জাতীয় বন জরিপের দ্বিতীয় চক্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেশের বনসম্পদ সংক্রান্ত একটি সমন্বিত ডেটাবেস গঠনে সহায়ক হবে। এটি নীতিনির্ধারণ, টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ, এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, “ভূপ্রকৃতি, ভূমি ব্যবহার ও প্রাকৃতিক মূলধনের মানচিত্র এবং একীভূত বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা দেশের টেকসই উন্নয়নকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।”

তিনি এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী ও সুপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করে বলেন, “এখন দরকার তৃতীয় পক্ষের বিশ্লেষণ, প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ও প্রতি পাঁচ বছর অন্তর তথ্য হালনাগাদ করার ব্যবস্থা।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের বন জরিপ আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই করা উচিত। বিদেশি সহায়তার জন্য অপেক্ষা করে থাকলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”

সভাপতিত্ব ও অংশগ্রহণকারীরা

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন:

  • ড. ফারহিনা আহমেদ, সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয়
  • শিয়াওকুন শি, বাংলাদেশের এফএও প্রতিনিধি
  • ড. মো. কামরুজ্জামান, মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
  • মালিক ফিদা এ খান, নির্বাহী পরিচালক, সিইজিআইএস (CEGIS)

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন:

  • মো. আবদুল্লাহ আব্রাহাম হোসেন, উপ-প্রকল্প পরিচালক, SUFAL
  • মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, পরিচালক, রিমোট সেন্সিং, সিইজিআইএস
  • ড. নিখিল চাকমা, সহকারী অধ্যাপক, RUST এবং জাতীয় সমাজ-অর্থনৈতিক পরামর্শক, FAO বাংলাদেশ
  • রাজিব মাহমুদ, বন জরিপ ও কার্বন মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, FAO-বিডি
  • জহির ইকবাল, উপ-সংরক্ষক, RIMS ইউনিট, বন অধিদপ্তর

কর্মশালায় বন অধিদপ্তর, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।


🔍 মূল বার্তাসমূহ সংক্ষেপে:

  • বন কেবল কার্বন বাজার নয়, ভবিষ্যতের জীবন ও পরিবেশের গ্যারান্টি
  • জনগণকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনা ও বাস্তব পরিকল্পনার ওপর জোর
  • জরিপের তথ্যভাণ্ডার নীতিনির্ধারণ ও জলবায়ু মোকাবিলায় সহায়ক
  • প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি এবং দেশীয় অর্থায়নে কার্যক্রম চালানোর আহ্বান

📌 উল্লেখযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি:
রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্য পরিবেশ ও বন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি দূরদর্শী ও জাতীয়ভাবে আত্মনির্ভরশীল পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।

100%
0%
0%
0%