পাঁচ ইসলামী ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত হবে নতুন “ইন্টার ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক”

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ও ইসলামী ব্যাংকিংকে আরও শক্তিশালী করতে পাঁচটি বেসরকারি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ইসলামী ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব আজ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
আজ রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রশিক্ষণ একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন,
“আজকের বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও ইসলামী ব্যাংকিংকে শক্তিশালী করতে পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।”
বিজ্ঞাপন
যে পাঁচ ব্যাংক একীভূত হবে:
১. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
২. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
৩. ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি
৪. এক্সিম ব্যাংক পিএলসি
৫. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি
প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের নাম হতে পারে “ইন্টার ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক” অথবা “কম্বাইন্ড ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি”, জানান শফিকুল আলম। তিনি আরও বলেন, নতুন ব্যাংকটি একীভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর সব সম্পদ ও দায়ভার গ্রহণ করবে এবং পূর্ণ বাণিজ্যিক ও পেশাদারভাবে পরিচালিত হবে।
মূলধন কাঠামো:
বৈঠকে উপস্থাপিত সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০,০০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৫,০০০ কোটি টাকা হবে পরিশোধিত মূলধন।
- সরকারের অবদান থাকবে ২০,০০০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১০,০০০ কোটি টাকা নগদে প্রদান করা হবে এবং বাকি ১০,০০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে সুকুক (Sukuk) বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে।
- এছাড়া ১৫,০০০ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের কাছ থেকে বেইল-ইন (bail-in) প্রক্রিয়ায় ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তর করা হবে, অর্থাৎ ব্যাংকের কিছু ঋণদাতা ও আমানতকারীর দাবি শেয়ারে রূপান্তর করে পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিশোধ করা হবে।
শফিকুল আলম আরও জানান, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-এর শেয়ার মালিকানা সংক্রান্ত মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকায় এটিকে এই একীভূত প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
নতুন ব্যাংকটি হবে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং নিয়মিত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে অর্থ বিভাগ সরকারের পক্ষে ব্যাংকটির মালিকানা ধারণ করবে। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন বছরের মধ্যে একজন কৌশলগত অংশীদার নির্ধারণ করে পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকটি বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে।
সবশেষে প্রেস সচিব নিশ্চিত করেন,
“এই একীভূতকরণের মাধ্যমে কোনো কর্মচারী চাকরি হারাবে না এবং কোনো আমানতকারী তাদের সঞ্চয় হারাবে না। বরং এই পদক্ষেপ দেশের ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও সুশাসন আরও বাড়িয়ে তুলবে।”
তথ্যসূত্র: বাসস
