যমুনা অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লংমার্চে পুলিশের বাধা: লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামানে শিক্ষার্থী-শিক্ষক আহত

তিন দফা দাবি নিয়ে যমুনা অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর পুলিশ বাধা প্রদান করেছে। আজ বুধবার দুপুরে কাকরাইল মসজিদের সামনে লংমার্চে বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং পরপর সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে আন্দোলনকারীরা জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে শুরু হয় এই লংমার্চ। তারা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। কিন্তু কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তাদের গতিরোধ করে। বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা করে এবং পরে সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আহতদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ই রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা মৎস্য ভবন মোড়ে অবস্থান নেন। বেলা ১টার দিকে তারা পুনরায় কাকরাইল মসজিদের সামনে ফিরে এসে অবস্থান নেন এবং সেখানেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান। বেলা সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তাদের অবস্থান চলছিল।
তিন দফা দাবিগুলো হলো—
১. আবাসনবৃত্তি প্রদান: আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি কার্যকর করতে হবে।
২. পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন দিতে হবে।
৩. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক ছাত্র সংগঠন এই লংমার্চে অংশগ্রহণ করে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার ‘জুলাই ঐক্য’ নামের এক ছাত্রীয় প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে (UGC) গিয়ে দাবি উত্থাপন করলেও আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় আজকের ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।
ঘটনার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ আশপাশে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।