বুক জ্বালাপোড়া ও গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণায় হলে কি করবেন?

                   
একজন ব্যক্তির হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠেছে এমন দৃশ্য
                 
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 18, 2025 9:55 অপরাহ্ন
                       
                           

বর্তমানে অনেকেই খাবার খাওয়ার পর বুকের মাঝখান থেকে শুরু হয়ে গলার দিক পর্যন্ত এক ধরনের জ্বালাপোড়া অনুভব করেন। কেউ একে বলেন গ্যাস্ট্রিক, কেউ অ্যাসিডিটি, আবার কেউ হার্টবার্ন বা আলসার। ডাক্তারি ভাষায় এটি মূলত (গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ) বা GERD নামে পরিচিত। এই সমস্যার মূল কারণ পাকস্থলীর অ্যাসিড গলার দিকে উঠে আসা। এতে বুক জ্বালা, ঢেকুর, টক ঢেঁকুর, মুখে টক ভাব, পেট ফাঁপা, বমি ভাব এমনকি হেঁচকি ও কাশিও হতে পারে।

এই সমস্যার পেছনে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে— যেমন অতিরিক্ত মসলা দেওয়া খাবার, কফি, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ বা টেনশন এবং গর্ভাবস্থায় হরমোনজনিত পরিবর্তন। এমনকি কিছু ওষুধ, যেমন অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রফেন, এই জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।

তবে ঘরে বসেই এই সমস্যার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, যদি কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন আনা যায়। নিচে রইল গবেষণা-ভিত্তিক ৭টি কার্যকর উপায়:

১. একবারে অনেক খাবেন না

একসাথে অনেক খাবার খেলে পাকস্থলী ফুলে যায়, ফলে অ্যাসিড গলার দিকে উঠে আসে। তাই অল্প অল্প করে বারবার খাবেন।

২. নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন

অনিয়মিত খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে ইনফেকশন ও গ্যাস্ট্রাইটিস হতে পারে, যা বুক জ্বালার একটি বড় কারণ।

৩. কোন খাবারে সমস্যা হচ্ছে খেয়াল রাখুন

সব খাবার নিষিদ্ধ নয়। মশলা, তেল বা ঝাল – যে খাবারে আপনার সমস্যা হয় শুধু সেটিই বাদ দিন। নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া বুঝে চলুন।

৪. রাতের খাবার ঘুমানোর ৩-৪ ঘণ্টা আগে খেতে হবে

খাওয়ার পরে চিৎ হয়ে শুলে অ্যাসিড সহজেই উপরে উঠে আসে। তাই সময়মতো খেয়ে তারপর কিছুক্ষণ জেগে থাকুন।

৫. ঘুমের সময় মাথা ও বুক একটু উঁচু করে শুতে হবে

বালিশে মাথা উঁচু করলেই হবে না, বরং খাটের এক দিক উঁচু করে নিতে হবে। এতে অ্যাসিড নিচে নেমে থাকবে।

৬. ওজন কমানোর চেষ্টা করুন

অতিরিক্ত ওজন অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি বাড়ায়। ওজন কমালে শুধু বুক জ্বালাই নয়, ডায়াবেটিস ও হার্ট রোগের ঝুঁকিও কমে।

৭. ধূমপান পরিহার করুন

ধূমপান অ্যাসিড রিফ্লাক্সের অন্যতম প্রধান কারণ। ধূমপান ছাড়লে জ্বালাপোড়া কমে আসে এবং শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

কখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?

সবক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে সমাধান সম্ভব না। যদি নিচের ৬টি এলার্মিং লক্ষণ দেখা যায়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে:

  1. অকারণে ওজন হ্রাস পাচ্ছে
  2. খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে
  3. বারবার বমি হচ্ছে
  4. বমি বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে বা কালো পায়খানা হচ্ছে
  5. পেটে চাকার মতো কিছু অনুভব হচ্ছে
  6. রক্তস্বল্পতা বা আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা

এছাড়া যদি তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় প্রতিদিন বুক জ্বালার সমস্যা হয়, অথবা হঠাৎ পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

এই সমস্যা ছোট মনে হলেও তা আপনার দৈনন্দিন জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সঠিক অভ্যাস, প্রয়োজনমতো চিকিৎসা এবং নিজের শরীরের সংকেত বোঝাই হতে পারে মুক্তির পথ।

                           

তথ্যসূত্র: ডা. তাসনিম জারা

                 
সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%