চিকিৎসাবিজ্ঞানে ২০২৫-এর নোবেল পুরস্কার পেলেন যারা

চিকিৎসাবিজ্ঞানে ২০২৫-এর নোবেল পুরস্কার পেলেন যারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ অক্টোবর 6, 2025 9:49 অপরাহ্ন

চিকিৎসাবিজ্ঞানে ২০২৫-এর নোবেল: মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী রহস্য উন্মোচনের জন্য এ বছর চিকিৎসা বিজ্ঞান ও শরীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হলেন তিনজন প্রখ্যাত গবেষক। সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট আজ ঘোষণা করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরি ই. ব্রাঙ্কোফ্রেড রামসডেল এবং জাপানের শিমন সাকাগুচি যৌথভাবে এই সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

তাঁদের এই আবিষ্কারের মূল ভিত্তি হলো ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ —যা হলো শরীরের এক অত্যাধুনিক অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করে, কীভাবে আমাদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিকারক ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করার পাশাপাশি ভুলবশত নিজের কোষ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে। এই আত্ম-সহনশীলতার ঘাটতি থেকেই জন্ম নেয় অটোইমিউন রোগগুলো

যে রহস্য উন্মোচিত হলো: ‘সহনশীলতার দ্বিতীয় স্তর’

আমাদের রোগ প্রতিরোধ কোষগুলো প্রশিক্ষণের জন্য প্রথমে থাইমাস নামক অঙ্গে যায়। সেখানে তারা শিখে নেয় যে শরীরের কোন কোষগুলি ‘নিজস্ব’ এবং কোনগুলি ‘বহিরাগত’। কিন্তু কিছু ‘বিদ্রোহী’ প্রতিরোধ কোষ এই প্রশিক্ষণ এড়িয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই তিন বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী গবেষণা দেখিয়েছে, শরীরের অন্য অংশে (Peripheral Tissues) এই বিদ্রোহী কোষগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য একটি দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় থাকে। এই প্রক্রিয়াকেই বলা হয় ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’।

অধ্যাপক সাকাগুচি এই প্রক্রিয়ার মূল খেলোয়াড় ‘নিয়ন্ত্রক টি-কোষের’ (Regulatory T-cells বা Tregs) অস্তিত্ব এবং ভূমিকা প্রমাণ করেন। এই Tregs কোষগুলো অনেকটা শান্তিরক্ষীর মতো কাজ করে—এরা অন্যান্য আক্রমণাত্মক প্রতিরোধ কোষকে থামিয়ে দিয়ে নিশ্চিত করে যে কোনোভাবেই যেন নিজের কোষের ওপর হামলা না হয়। অন্যদিকে, ব্রাঙ্কো এবং রামসডেল এই Tregs কোষগুলোর কার্যকারিতার পেছনে থাকা আণবিক প্রক্রিয়াগুলি বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।

বিজ্ঞাপন

মানবজাতির জন্য এই আবিষ্কারের তাৎপর্য

এই আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এটি কেবল কৌতূহল মেটানো গবেষণা নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে:

  • অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা: রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিসের মতো মারাত্মক রোগগুলোর মূলে রয়েছে এই আত্ম-সহনশীলতার অভাব। এখন Tregs কোষগুলিকে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এই রোগগুলোর জন্য আরও কার্যকর এবং নিরাময়মুখী থেরাপি তৈরি করা সম্ভব হবে।
  • অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও প্রত্যাখ্যান: প্রতিস্থাপিত অঙ্গকে শরীর ‘বিদেশি’ মনে করে বাতিল করে দেয়—যা ট্রান্সপ্ল্যান্ট চিকিৎসায় এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই টলারেন্স প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে অঙ্গ প্রত্যাখ্যানের হার বহুলাংশে কমানো যেতে পারে।
  • ক্যানসার থেরাপি: ক্যানসার কোষেরা প্রায়শই এই টলারেন্সের সুযোগ নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নজর এড়িয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা এখন এই প্রক্রিয়াকে উল্টো করে প্রতিরোধ কোষগুলোকে ক্যানসারের বিরুদ্ধে আরও বেশি কার্যকরভাবে সক্রিয় করে তোলার নতুন পথ খুঁজছেন।

গত বছরের (২০২৪) নোবেল বিজয়ী

প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা যায়, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও শরীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন দুইজন গবেষক:

  • ভিক্টর অ্যামব্রোস
  • গ্যারি রুভকুন

তাঁরা মাইক্রোআরএনএ নামক এক ক্ষুদ্র আরএনএ অণু আবিষ্কার এবং জিন নিয়ন্ত্রণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নির্ধারণের জন্য পুরস্কৃত হন। এই আবিষ্কার জীববিজ্ঞানে জিন নিয়ন্ত্রণের একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রক্রিয়া উন্মোচিত করেছিল।


তথ্যসূত্র: Nobel Prize Org

0%
0%
0%
0%