ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’: ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধের পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা

ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’: ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধের পর নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশোধনঃ জুলাই 6, 2025 4:42 অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তীব্র বিরোধের কয়েক সপ্তাহ পরই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক।

স্থানীয় সময় শনিবার নিজের মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স -এ “আমেরিকা পার্টি” গঠনের কথা জানান এই ধনকুবের। এই দলকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তবে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কর্তৃপক্ষ (ফেডারেল ইলেকশন কমিশন – FEC) এর কাছে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। ইলন নিজে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেননি, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে কে হবেন এই নতুন দলের নেতা, সে সম্পর্কেও কিছু জানাননি তিনি।

এর আগেও ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়ার সময় ইলন প্রথম “নতুন রাজনৈতিক দল” গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সে সময় এক্স-এ তিনি একটি জরিপ চালান যেখানে অনুসারীদের প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্রে কি একটি নতুন রাজনৈতিক দল দরকার?

শনিবারের পোস্টে সেই জরিপের কথাই উল্লেখ করে ইলন লেখেন:
“২:১ ব্যবধানে আপনারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল চেয়েছেন, আর আজ সেটিই পাচ্ছেন!”

তিনি আরও বলেন, “অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করে দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি একদলীয় ব্যবস্থা, গণতন্ত্র নয়। আজ ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হলো আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে।”

এখনও পর্যন্ত ফেডারেল ইলেকশন কমিশনের ওয়েবসাইটে দলটি নিবন্ধনের কোনও তথ্য প্রকাশ পায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের বাইরে থেকেও কিছু দল মাঝেমধ্যে আলোচনায় এসেছে, যেমন লিবার্টেরিয়ান পার্টি, গ্রিন পার্টি বা পিপলস পার্টি। তবে তারা কখনও বড় ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারেনি। গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জয় ঠেকাতে ব্যর্থ হয়।

ট্রাম্পের প্রতি ইলনের সমর্থন এক সময় এতটাই ছিল যে, গত বছরের নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিকবার ট্রাম্পের পাশে নাচতে দেখা যায় তাকে। এমনকি নিজের চার বছর বয়সী ছেলেকেও ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দেখা করাতে নিয়ে যান তিনি।

ইলন ছিলেন ট্রাম্পের অন্যতম আর্থিক সহায়কও। ট্রাম্পকে পুনরায় প্রেসিডেন্ট বানাতে তিনি ব্যয় করেন ২৫০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৭৫০ কোটি টাকা)।

নির্বাচনের পর ট্রাম্প প্রশাসনে “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (DOGE)” বা ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’-এর প্রধান করে নিয়োগ পান ইলন। এই বিভাগের কাজ ছিল কেন্দ্রীয় বাজেটে খরচ কমানো ও সংস্কার আনা।

তবে মে মাসে ইলন ওই প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করেন এবং প্রকাশ্যে ট্রাম্পের নতুন ট্যাক্স ও বাজেট পরিকল্পনার সমালোচনা শুরু করেন।

ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত নতুন আইনে বিপুল পরিমাণে খরচ ও কর ছাড়ের ঘোষণা রয়েছে, যা আগামী এক দশকে মার্কিন বাজেটে তিন ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঘাটতি সৃষ্টি করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এই আইনে পরিবেশবান্ধব গাড়ি বা টেসলার মতো বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য কোনও ভর্তুকি বা গ্রিন ট্রানজিশনের ওপর জোর দেওয়া হয়নি—যা ইলনের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

ট্রাম্প এরপর Truth Social-এ লেখেন,
“Elon may get more subsidy than any human being in history, by far,”
অর্থাৎ, “ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি পেয়েছেন ইলন। তার ভর্তুকি না থাকলে হয়তো তার ব্যবসা গুটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যেতে হতো।”

এছাড়া ট্রাম্প হুমকি দেন, ইলনের কোম্পানিগুলোর ভর্তুকি খতিয়ে দেখতে DOGE বিভাগ ব্যবহার করা হবে। উল্লেখ্য, ইলন মালিকানাধীন SpaceX যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য রকেট উৎক্ষেপণ করে এবং Starlink উপগ্রহের মাধ্যমে মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে।

এখন দেখার বিষয়, ‘আমেরিকা পার্টি’ আদৌ কতদূর গড়িয়ে যায়, তা মার্কিন রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, এবং ইলন কীভাবে এই দল পরিচালনা করবেন—তা ভবিষ্যতের হাতে।

তথ্যসূত্র: BBC

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%