হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে নতজানু নেতানিয়াহু, টালমাটাল সরকার

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে নতজানু নেতানিয়াহু, টালমাটাল সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর 30, 2025 8:24 অপরাহ্ন

ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যেন পরাজিত এক নেতার মতোই লাগছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে “পুরোপুরি বিজয়”র প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেতানিয়াহু শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর সব সঠিক কথা বললেও তার কণ্ঠ ছিল ভাঙা, মুখে ক্লান্তির ছাপ, শক্তি ছিল নিস্তেজ।

বিজ্ঞাপন

ট্রাম্পকে তিনি প্রশংসা করেছেন “হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় বন্ধু” হিসেবে। কিন্তু এই বন্ধুত্বই এখন তার সরকারের পতনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তার কট্টর ডানপন্থী মিত্ররা হুঁশিয়ারি দিয়েছে—যদি বেশি ছাড় দেওয়া হয় তবে তারা জোট ছেড়ে দেবেন।

ইসরায়েলের মন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও ইতামার বেন-গভির প্রকাশ্যে গাজা উপত্যকা দখল, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ এবং সেখানে পুনরায় ইহুদি বসতি স্থাপনের দাবি তুলেছেন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কোনো ধরনের ভূমিকা দেওয়ার বিপক্ষে তারা সবসময়ই অনড় ছিলেন। অথচ নতুন যে চুক্তি হয়েছে, তাতে ওই ভূমিকার উল্লেখ রয়েছে, যদিও নানা শর্তসাপেক্ষে।

এমন বাস্তবতায় নেতানিয়াহুর জন্য দ্বিধা আরও গভীর হচ্ছে। ট্রাম্প একদিকে তাকে দেখাচ্ছেন সম্ভাব্য ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার—মধ্যপ্রাচ্যে নতুন শান্তির পথ ও আরব প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন; অন্যদিকে এর মূল্য হতে পারে তার সরকার ও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলমান দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার কথাও বিবেচনা করছেন। সমালোচকরা বলছেন, এ কারণেই তিনি পদত্যাগ করতে চান না—ক্ষমতা হারালে আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।

তবে দেশের জনগণকে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন, তিনি কোনোভাবেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে সম্মত নন। ক্যামেরার সামনে তিনি বলেছেন, “একেবারেই না। চুক্তিতে এ রকম কিছু লেখা নেই। বরং আমরা বলেছি—ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে কোনো প্রচেষ্টাকে আমরা জোরপূর্বক প্রতিরোধ করব।”

ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পুরো চুক্তির ওপর মন্ত্রিসভায় ভোট হবে না, বরং কেবল বন্দী বিনিময়—অর্থাৎ ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিপরীতে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবের ওপর সিদ্ধান্ত হবে।

এখন প্রশ্ন হলো—নেতানিয়াহু কি তার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্যই সময় কিনতে চাইছেন, নাকি তিনি বাজি ধরেছেন হামাস এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করবে এবং যুদ্ধ চালু থাকবে? হোয়াইট হাউসের অস্বস্তিকর সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি হামাস তাদের অংশ পালন না করে, তবে ইসরায়েল “কাজ শেষ করার” জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে। ট্রাম্পও এ বিষয়ে তাকে সমর্থন দিয়েছেন।

নেতানিয়াহুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবারই তিনি সমঝোতার মাঝপথে পিছু হটেছেন। সমালোচকরা বলেন, তার মূল লক্ষ্য যুদ্ধ শেষ করা নয়, বরং হামাসকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে তিনি এমন বিষয় মেনে নিয়েছেন, যেগুলো তার পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ঠেকিয়ে রেখেছিলেন।

এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে, চুক্তি না করার পরিণতি তার কাছে চুক্তি করার পরিণতির চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আর যদি সত্যিই ট্রাম্প তাকে বাধ্য করে মিত্র ও সরকার বেছে নিতে বলেন, তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—একই কাজ কেন নয় মাস আগে জো বাইডেন করেননি, যখন এই শান্তি চুক্তি সম্ভব ছিল এবং প্রায় ৩০ হাজার গাজার মানুষ তখনও জীবিত ছিলেন?

তথ্যসূত্র: বিবিসি

0%
0%
0%
0%