ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর প্রথমবার প্রকাশ্যে এলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের পর প্রথমবার প্রকাশ্যে এলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুলাই 6, 2025 4:58 অপরাহ্ন

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর এই প্রথমবার জনসমক্ষে এলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। শনিবার (৬ জুলাই) আশুরার একদিন আগে রাজধানী তেহরানের এক মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন।

এই উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, খামেনি উপস্থিতদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এবং পাশে থাকা শীর্ষ ধর্মীয় নেতা মাহমুদ কারিমিকে আহ্বান করছেন দেশপ্রেমমূলক গান “ও ইরান” গাওয়ার জন্য। সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের সময় এই গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

এটি খামেনির ১৩ জুন শুরু হওয়া ১২ দিনের যুদ্ধের পর প্রথম জনসম্মুখে আসা। যুদ্ধের সময় ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হন।

যুদ্ধ শুরু হয় ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার মাধ্যমে, যা ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে চালানো হয়। এর জবাবে ইরানও ইসরায়েল লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়।

সংঘাতকালীন ১২ দিনে খামেনি তিনটি ভিডিও বার্তায় টেলিভিশনে উপস্থিত হলেও অনেকেই ধারণা করেছিলেন তিনি গোপন বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন।

২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর হামলায় যোগ দেয়। এই অভিযানে অংশ নেয় ১২৫টি মার্কিন সামরিক বিমান। হামলার লক্ষ্য ছিল ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা।

ইরানের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই ১২ দিনের যুদ্ধে ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

২৬ জুন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির দুই দিন পর একটি ভিডিও ভাষণে খামেনি “জয়” দাবি করেন এবং বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে কিছুই অর্জন করতে পারেনি।”

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প খামেনির বক্তব্যকে “মিথ্যা” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করে দেওয়া হয়েছে এবং খামেনিকে তিনি “একটি অত্যন্ত ভয়াবহ ও লজ্জাজনক মৃত্যু” থেকে বাঁচিয়েছেন।

খামেনির শনিবারের এই প্রকাশ্য উপস্থিতিকে ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো বড় করে প্রচার করেছে। টেলিভিশনে তার অনুগামীদের উল্লাস প্রকাশের দৃশ্যও দেখানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টিভি নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন খামেনির প্রকাশ্যে ফিরে আসার বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ভিডিও করে পাঠায়।

উল্লেখ্য, ইরানে এখন চলছে মহররম মাসের শোকাবহ সময়। এই সময় শিয়া মুসলিমরা বিশেষভাবে ইমাম হোসেনের শাহাদাত স্মরণে শোক পালন করে থাকেন। আশুরা অনুষ্ঠিত হয় মহররমের দশম দিনে—এবছর সেটি পড়েছে ৬ জুলাই। এই সময় ঐতিহ্য অনুযায়ী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা জনসমক্ষে উপস্থিত থাকেন।

খামেনির প্রকাশ্যে আগমন শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ। যুদ্ধ, মার্কিন হামলা ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার পর জনসমক্ষে তার ফিরে আসা ইরানিদের মনোবলে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।

39.5%
58.1%
2.3%
0%