ইরানে ফের আলোচনায় রেজা পাহলভি: বিদেশি শক্তির দরজায় ‘ক্ষমতায় ফেরা’র পুরনো চেষ্টা

ইরানে ফের আলোচনায় রেজা পাহলভি: বিদেশি শক্তির দরজায় ‘ক্ষমতায় ফেরা’র পুরনো চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 27, 2025 9:28 পূর্বাহ্ন

ইরানে আবারও আলোচনায় এসেছেন দেশটির সাবেক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র রেজা পাহলভি। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে নির্বাসনে থাকা এই ‘রাজপুত্র’ বর্তমানে বিদেশি শক্তির সহায়তায় ইরানের ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টায় আলোড়ন তুলেছেন। চলমান ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া সংকটকে তিনি নিজের রাজনৈতিক সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছেন বলে জানিয়েছে তেহরান টাইমস

বিশ্লেষক ওরি গোলবার্গ বলেন, “গত ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে রেজা পাহলভি ইরানের নতুন নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে এ পর্যন্ত তার কোনো প্রচেষ্টাই জনমনে দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি।”

সম্প্রতি তেলআবিব সফরকালে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন রেজা পাহলভি এবং ইসরাইলি আগ্রাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সহানুভূতি প্রকাশ করেন। বিশ্লেষকদের মতে, এমন অবস্থান ইরানের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং তার ব্যক্তিগত ক্ষমতার মোহ প্রকাশ করে।

প্যারিসে এক ভাষণে রেজা পাহলভি সরাসরি পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তারা তাকে ইরানের নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনার পথ সুগম করে। তিনি দাবি করেন, তার হাতে রয়েছে ইরানের “উত্তরণ রূপরেখা”। এর আগে ইরান ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি সরকারবিরোধী চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ইরানের রাজনৈতিক ও সামরিক কাঠামো ধ্বংসের মুখে” এবং জনগণকে প্রতিবাদে নামার ডাক দেন।

তেহরানের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, “রেজা পাহলভি যেভাবে শত্রু দেশগুলোর দয়ায় নির্ভর করছেন, তা তার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব স্পষ্ট করে। ইরানি জনগণ তার কোনো আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তার পরিকল্পনার মধ্যে বাস্তবতা কিংবা সার্বভৌম চেতনার কোনো ভিত্তি নেই।”

রেজা পাহলভি একাই নন। তার মতো আরও কয়েকজন নির্বাসিত ইরানি বিরোধী নেতা চলমান সংকটে দেশের পাশে না দাঁড়িয়ে বরং বিদেশি হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন এমকেও নেত্রী মরিয়ম রাজাভি, যিনি ১৯৮০ এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইসরাইলি হামলাকে তিনি “নতুন অধ্যায়ের সূচনা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার সংগঠন বিভিন্ন গুপ্তচরবৃত্তি ও সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য কুখ্যাত।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সাংবাদিক মাসা আ নেজাতও বারবার পশ্চিমা সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে কথা বলেছেন। সাম্প্রতিক হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই হামলা বিরোধী দলগুলোর পরিকল্পনাকে ১৫ থেকে ২০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে।”

তবে ইরানি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব মন্তব্য বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সমাজে গভীর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সাধারণ ইরানিরা দেশে বা বিদেশে যেই হোক না কেন, ইরানের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপকে একরকম জাতীয় অপমান হিসেবেই দেখছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি মদদে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখা রেজা পাহলভির কৌশল আসলে সেই ঐতিহাসিক ঔপনিবেশিক রাজনীতিরই পুনরাবৃত্তি—যেখানে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজস্ব রাজক্ষমতার স্বপ্ন বোনা হয়। তবে আধুনিক ইরানি সমাজ সেই বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে, এবং এমন উদ্যোগকে প্রত্যাখ্যানই করছে জনগণ।

তথ্যসূত্র: তেহরান টাইমস

0%
0%
0%
0%