যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, এনপিটি থেকে সরে আসার আশঙ্কা জোরালো

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, এনপিটি থেকে সরে আসার আশঙ্কা জোরালো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 24, 2025 9:55 অপরাহ্ন

ইরানের নাটান্স, ফোরো ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় একের পর এক আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববারের এই হামলায় গুরুতর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যদিও ইরান এখনো পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পারমাণবিক বোমার অভাব ইরানকে লক্ষ্যবস্তু হওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। বরং এই হামলা দেশটিকে আরও দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, ইরান এখন আর কূটনৈতিক চাপ তৈরির জন্য সময় নিচ্ছে না, বরং পরিস্থিতির চরমতায় একটি দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হবে। এমন অবস্থায় ইরান যদি এনপিটি (NPT – [Non-Proliferation Treaty] – পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) থেকে সরে দাঁড়ায়, সেটি হবে তাদের অন্যতম বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ।

বিশ্বে বর্তমানে নয়টি দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক রাষ্ট্র ঘোষণা করেনি। এসব দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক স্থাপনা পরিচালনা করে এবং ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান বা সাবমেরিনের মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।

এই দেশগুলো অননুমোদিত ব্যবহারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি এনপিটি বর্তমানে প্রবল চাপে রয়েছে।

১৯৭০ সালে কার্যকর হওয়া এনপিটি’র মূল উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং অস্ত্র বিস্তার রোধ ও নিরস্ত্রীকরণে অগ্রগতি অর্জন। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো অঙ্গীকার করেছে যে, যারা অস্ত্র তৈরি করেনি তারা তা তৈরি করবে না এবং যাদের রয়েছে তারা তা হস্তান্তর বা অন্যকে সাহায্য করবে না।

এই চুক্তির তত্ত্বাবধানে রয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)। ১৯১টি রাষ্ট্র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিতে পরিণত করেছে।

তবে এনপিটি চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। কারণ, ২০২৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সর্বশেষ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ (New START) মেয়াদোত্তীর্ণ হতে চলেছে এবং নতুন কোনো চুক্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি এনপিটি থেকে সরে আসে, তাহলে তা কেবল অঞ্চলগত নিরাপত্তাকেই নয়, বরং বৈশ্বিক পরমাণু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

ইতিমধ্যে উত্তর কোরিয়া ২০০৩ সালে এনপিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল, ভারত এবং পাকিস্তান কখনও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। যদি ইরানও এই পথ অনুসরণ করে, তাহলে সৌদি আরব, মিশরসহ আরও কিছু দেশ এনপিটি থেকে সরে আসার কথা বিবেচনা করতে পারে। বিশেষত মিশর দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় না থাকায় এটি বৈষম্যের শিকার।

বিশ্ব সম্প্রদায় এখন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে—ইরান এই সংকটের প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেয়। এনপিটি অব্যাহত থাকলেও পাঁচ বছর পরপর এর কার্যকারিতা পর্যালোচনা করা হয়, এবং ধীরে চলা নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় সদস্য দেশগুলোর হতাশা বাড়ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি আরও দেশ এনপিটি থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে বৈশ্বিক পারমাণবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভিত্তি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

0%
0%
0%
0%