৫ বছর পর ভারতে ফিরলো শেইন, এবার ঈশা আম্বানির হাত ধরে

ছবিঃ সংগ্রহকৃত
চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালের জুন মাসে ভারত সরকার জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড শেইন (Shein)-এর মোবাইল অ্যাপ নিষিদ্ধ করে দেয়। পাঁচ বছর পর, ভারতের ই-কমার্স বাজারে এই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডটি নতুনরূপে ফিরেছে মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani) ও তাঁর কন্যা ঈশা আম্বানি (Isha Ambani)-র হাত ধরে, রিলায়েন্স রিটেইল (Reliance Retail)-এর অধীনস্থ আজিও (Ajio) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।
তবে পূর্বের জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও শেইন (Shein) এখনো ভারতীয় গ্রাহকদের মন জয় করতে পারছে না। AppMagic, একটি মার্কিন অ্যাপ বিশ্লেষক সংস্থা, জানিয়েছে — ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুনঃপ্রবর্তনের পর অ্যাপটি প্রতিদিন গড়ে ৫০,০০০ বার ডাউনলোড হলেও, এপ্রিলের শুরুতে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩,৩১১ বার।
বিশ্বজুড়ে মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার মাঝে শেইন (Shein) আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এলেও, ভারতের বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সংশয়ে রয়েছেন।
রিলায়েন্সের ই-কমার্স আধিপত্যের লক্ষ্যে নতুন চাল
ভারতের ৬০% ই-কমার্স বাজার বর্তমানে অ্যামাজন (Amazon) ও ফ্লিপকার্ট (Flipkart – ওয়ালমার্ট ব্যাকড) দখলে রেখেছে। মুকেশ আম্বানি (Mukesh Ambani)-র নেতৃত্বে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (Reliance Industries) গত পাঁচ বছরে ডিজিটাল সার্ভিস, অনলাইন ফার্মেসি ও কুইক-কমার্স সেক্টরে বিনিয়োগ করলেও এখনো উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেনি।
ঈশা আম্বানি (Isha Ambani)-র নেতৃত্বে প্রযুক্তিনির্ভর কৌশল
রিলায়েন্স রিটেইল (Reliance Retail)-এর ব্যবস্থাপনায় থাকা ঈশা আম্বানি (Isha Ambani) এবার শেইন (Shein)-এর উন্নত এআই (AI)-ভিত্তিক ট্রেন্ড স্পটিং ও অটোমেটেড ইনভেন্টরি সিস্টেম ব্যবহার করে ভারতীয় ই-কমার্স বাজারে নিজেদের জন্য একটি পৃথক অবস্থান তৈরির লক্ষ্য নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, রিলায়েন্সের বিশাল ইকোসিস্টেম — ৪৭৬ মিলিয়ন জিও (Jio) সাবস্ক্রাইবার, ৩০ কোটির বেশি জিওমার্ট (JioMart) ইউজার এবং শক্তিশালী মিডিয়া নেটওয়ার্ক — শেইন (Shein)-এর এআই অ্যালগরিদমকে আরও কার্যকর করে তুলতে পারে এবং ভারতীয় ক্রেতাদের জন্য পার্সোনালাইজড প্রোডাক্ট লাইন তৈরি করতে পারে।
শেইন (Shein)-এর বৈশ্বিক শক্তি বনাম ভারতীয় চ্যালেঞ্জ
বিশ্বব্যাপী শেইন (Shein)-এর প্ল্যাটফর্মে প্রায় ৬ লক্ষ পণ্যের ক্যাটালগ রয়েছে, যা গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী উৎপাদন ও স্টক পরিচালনা করে। কিন্তু ভারতীয় গ্রাহকদের অভিযোগ, ভারতের শেইন (Shein) অ্যাপে পণ্যের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম এবং দাম বেশি। গুগল প্লে ও অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে এই কারণে নেতিবাচক রেটিং দেখা গেছে।
নতুন কাঠামো: আর নেই চীনা পণ্য সরাসরি বিক্রি
এবার শেইন (Shein) ভারতের বাজারে ফিরেছে একটি নতুন কাঠামোতে। আগের মতো আর চীনে তৈরি পোশাক ও অ্যাকসেসরিজ সরাসরি ভারতে আমদানি করে বিক্রি করছে না। বরং রিলায়েন্স নিজেই উৎপাদন, বিতরণ, সাপ্লাই চেইন ও গ্রাহক তথ্য ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছে। এই সংস্কারপ্রক্রিয়ায় ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য একটি স্কেলড-ডাউন সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে।
সম্ভাবনা আছে, তবে পথ কঠিন
শেইন (Shein) আবারও ভারতের ফ্যাশন বাজারে পা রাখলেও, মূল্য প্রতিযোগিতা, ক্যাটালগ বৈচিত্র্য, গ্রাহক সন্তুষ্টি ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্ল্যাটফর্মের চাপে এটি টিকে থাকতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ঈশা আম্বানি (Isha Ambani)-র প্রযুক্তিনির্ভর নেতৃত্ব ও রিলায়েন্সের বিশাল অবকাঠামো যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে শেইন (Shein) আবারও ভারতের তরুণ প্রজন্মের ফ্যাশন চয়েজ হয়ে উঠতে পারে।