২০২৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মারিয়া কোরিনা মাচাদো

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছেন। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সংগ্রামে তাঁর অসামান্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ নরওয়ের নোবেল কমিটি আজ শুক্রবার ১০ অক্টোবর রাজধানী ওসলোতে এ ঘোষণা দিয়েছে।
নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে—
“মারিয়া কোরিনা মাচাদো ভেনেজুয়েলায় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য এক অবিচল সংগ্রামী। তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে জনগণের কণ্ঠকে জাগ্রত করেছেন। তাঁর কাজ শুধু ভেনেজুয়েলার নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ক।”
দেশে গণতন্ত্রের জন্য নিরলস লড়াই
মাচাদো দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে আসছেন। তিনি বর্তমানে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল ভেন্তে ভেনেজুয়েলা–এর নেতা। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর শাসনের অধীনে দমননীতি, নির্বাচনী অনিয়ম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তিনি ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
পুরস্কার ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মারিয়া কোরিনা মাচাদো বলেন—
“আমি এই পুরস্কারকে আমার দেশ, জনগণ ও তাদের সংগ্রামের প্রতি উৎসর্গ করছি। এটি সেই সাহসী মানুষদের স্বীকৃতি, যারা নির্ভয়ে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছে ও লড়াই করে চলেছে।”
নোবেল কমিটির প্রশংসা
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান বার্গিট রেইস-আন্ডারসন বলেন—
“মারিয়া কোরিনা মাচাদো এমন এক নারী, যিনি অন্ধকারের মাঝেও গণতন্ত্রের শিখাকে প্রজ্জ্বলিত রেখেছেন। তিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন, শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম সর্বদা ব্যক্তিগত সাহস ও মানবিকতার ওপর নির্ভরশীল।”
অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পেছনে ফেললেন মাচাদো
এ বছরের শান্তি পুরস্কারের জন্য আলোচনায় ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন প্রার্থী, যাদের মধ্যে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি উদ্যোগের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচিত ছিলেন।
তবে নোবেল কমিটি জানায়, তাদের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ, সাহসিকতা ও গণতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর, নরওয়ের রাজধানী ওসলোতে। সেদিন নোবেল পুরস্কারের অন্যান্য বিভাগ—পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, চিকিৎসাবিদ্যা ও অর্থনীতি—বিজয়ীরাও তাঁদের পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
ভেনেজুয়েলার ইতিহাসে প্রথম
এই পুরস্কারের মাধ্যমে মারিয়া কোরিনা মাচাদো ভেনেজুয়েলার ইতিহাসে প্রথম নারী ও প্রথম নাগরিক হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করলেন। আন্তর্জাতিক মহলে এটি “লাতিন আমেরিকায় গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ” হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য তথ্য:
- ২০২৪ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন ইরানের মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মাদি।
- ২০২৫ সালে মাচাদোর পুরস্কারকে বিশ্লেষকরা গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের জন্য “বিশ্বব্যাপী নৈতিক সমর্থনের প্রতীক” হিসেবে দেখছেন।
- মাচাদোর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কারাবাস, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি দমননীতির মুখেও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া
পুরস্কার ঘোষণার পর ভেনেজুয়েলাসহ লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আনন্দমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। অনেক নাগরিক সামাজিক মাধ্যমে মাচাদোকে “গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর” বলে অভিহিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও একে “ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রে নতুন আশা” হিসেবে দেখছে।
তথ্যসূত্র: নোবেল কমিটি
