ইসরায়েল-ইরান সংঘাত তীব্রতর, নিহত শতাধিক, যুদ্ধ ছড়াচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে – ট্রাম্প বললেন, “যুদ্ধ থামিয়ে শান্তিচুক্তির সময় এখন”

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত তীব্রতর, নিহত শতাধিক, যুদ্ধ ছড়াচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে – ট্রাম্প বললেন, “যুদ্ধ থামিয়ে শান্তিচুক্তির সময় এখন”
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশোধনঃ জুন 16, 2025 11:10 পূর্বাহ্ন

তেলআবিব থেকে শুরু হওয়া চলমান ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে। ইসরায়েল পশ্চিম ইরানে কয়েক ডজন সারফেস-টু-সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুতে ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে। তিনি এমনও মন্তব্য করেছেন যে, “ইরানের সরকার পতনের সম্ভাবনা রয়েছে।”

ইরান জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল দাবি করছে, তাদের আক্রমণ মূলত ইরানের তেল শোধনাগার ও পরমাণু কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর উপর কেন্দ্রিত। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, তেহরানের কাছে শান তেল শোধনাগারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড চলছে।

এদিকে ইসরায়েলেও পাল্টা আক্রমণে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অনেকে। হাইফার শহরে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এছাড়া কিরিয়াত গ্যামসহ কয়েকটি শহরেও আঘাত হানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ইরানের বিপুলসংখ্যক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে এবং ‘এখনো অনেক লক্ষ্য বাকি রয়েছে।’ নেতানিয়াহু বলেন, “ইরান এখন দুর্বল এবং এটিই আমাদের সুযোগ।” তিনি আরও দাবি করেন, “ইরানের ৮০% মানুষ ধর্মীয় শাসকদের সরিয়ে দিতে প্রস্তুত।”

ইরানে আতঙ্ক, বিচার মন্ত্রণালয়ে আঘাত

ইরানের বিচার মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সরকারি স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা চালানো হয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা এই যুদ্ধ চাইনি। আমরা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক ইস্যু সমাধানে মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু আমাদের উপর এই যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

ইসরায়েলি ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় ইরানি জনগণ ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ তা করতে নিষেধ করেছে। এক ইরানি নারী বলেন, “আমি দুই রাত ঘুমাতে পারিনি। মনে হচ্ছে, যেন আবার ১৯৮০-এর ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়েছে।”

নেতানিয়াহুর আহ্বান: “জনগণ যেন সরকার পতনের ডাক দেয়”

নেতানিয়াহু ইরানি জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনি ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের সময় নির্বাসিত হওয়া রাজপুত্র রেজা পাহলাভিকে ‘প্রত্যাবর্তনের’ সম্ভাব্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন।

তবে ইরানের অনেক সরকারবিরোধী নাগরিকও ইসরায়েলকে বন্ধু হিসেবে দেখেন না। একজন বিরোধী নাগরিক বলেন, “আমি ইরান সরকারের সমর্থক নই, কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমরা ইসরায়েলের সামনে মাথা নত করবো না।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও যুক্তরাজ্যের প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ঘোষণা দিয়েছেন, সাইপ্রাসের আক্রিতিরি ঘাঁটিতে যুদ্ধবিমান পাঠানো হয়েছে। এতে ইউরোফাইটার টাইফুন ও ভয়েজার রিফুয়েলিং বিমানের কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বাহরাইনে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি, হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার, বিশেষ বাহিনী ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ কেবল ‘সতর্কতা ও প্রতিরক্ষা’র জন্য। তবে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, “যুক্তরাজ্য যদি ইসরায়েলকে সাহায্য করে, তবে ব্রিটিশ ঘাঁটিও হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।”

ট্রাম্পের সতর্কবার্তা ও শান্তিচুক্তির সম্ভাবনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি চান এই যুদ্ধ শেষ হোক একটি পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে। তিনি সম্প্রতি ইসরায়েলের একটি গোপন প্রস্তাব — ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করার পরিকল্পনা — সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ট্রাম্প বলেন, “ইরান এখনো কোনো আমেরিকানকে হত্যা করেনি, সুতরাং রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে হামলা চালানো অগ্রহণযোগ্য।” তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি আক্রমণের শিকার হই, তাহলে ইরানকে এমনভাবে জবাব দেওয়া হবে, যা ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “এই যুদ্ধ হয়তো শান্তিচুক্তির পথ আরও সংক্ষিপ্ত করবে।” যদিও ইরান আজ আলোচনার টেবিল ছেড়ে দিয়েছে, তবুও ট্রাম্পের মতে, সমঝোতার সম্ভাবনা এখনো উজ্জ্বল।

রাত গভীর, আকাশে হামলার আশঙ্কা

তেলআবিব ও তেহরানে রাত গভীর হচ্ছে। তিন রাত ধরে চলছে ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো হামলা। কূটনীতির কোনো অগ্রগতি না থাকায় চতুর্থ রাতেও যুদ্ধ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে — এই আগুন কি ছড়িয়ে পড়বে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে?

100%
0%
0%
0%