বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক জোরদারে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর

বাংলাদেশ এবং চীনের পতাকা
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক জোরদারে প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
একইসাথে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে, যেন বেইজিংয়ের সাথে সম্পর্ক গভীর করা অন্যদের প্রতি ভুল বার্তা না দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন: “বাংলাদেশের জন্য রাজনীতি, বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সহযোগিতার দিক থেকে চীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, চীনের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখা অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি বার্তা।”
আরেক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ চীনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করেই সম্পর্ক তৈরি করছে এবং অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তির প্রতিক্রিয়াও মূল্যায়ন করছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কৌশলগত সার্বভৌমত্ব রয়েছে—যার মাধ্যমে দেশটি স্বাধীনভাবে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে, একইসাথে, অন্যান্য দেশের সাথে যোগাযোগ করাও গুরুত্বপূর্ণ, কেন আমরা চীনের সাথে এই প্রেক্ষাপটে জড়িত হচ্ছি তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।”
পররাষ্ট্রনীতিতে কৌশলগত সার্বভৌমত্ব
প্রত্যেক দেশ তাদের জাতীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে এবং কৌশলগত সার্বভৌমত্ব বলতে এ ক্ষেত্রেই একটি দেশের স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে বোঝানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জাতিসংঘে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ইস্যুতে বাংলাদেশের ভোটিং সিদ্ধান্তের উদাহরণ দেন।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে দুটি আলাদা প্রস্তাব জাতিসংঘে উপস্থাপন করেছিল। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও ইউরোপীয় প্রস্তাবে অনুপস্থিত ছিল। এটি ছিল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইউরোপীয় দেশগুলোকেও আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি, কেন আমরা সেই প্রস্তাবে ভোট দিইনি।”
আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরকে কেন্দ্র করে যেসব বৈশ্বিক শক্তির স্বার্থ রয়েছে, তাদের সাথেও বাংলাদেশ আলোচনা করতে পারে।
তিনি বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবসময় ভারসাম্য খোঁজে। তবে কূটনীতিতে ভারসাম্য মানেই সবসময় সমান ৫০-৫০ ভাগ নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী তা কখনো ৬০-৪০ ভাগও হতে পারে—যেমনটি জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় দেখা গেছে।”
চীনের বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (GDI)
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিনটি বৈশ্বিক উদ্যোগ চালু করেছেন—গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (GDI), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (GSI), এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (GCI)।
চীন প্রথম ২০২২ সালে বাংলাদেশকে গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (GDI) উপস্থাপন করে এবং এটি প্রধান উপদেষ্টার সফরে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে।
এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এই উদ্যোগটি সতর্কভাবে মূল্যায়ন করছি। কখনো কখনো, একটি চুক্তির পাঠ্যাংশ গ্রহণযোগ্য হলেও বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমাদের জাতীয় স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। সবদিক বিবেচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
বোআও ফোরাম ও সম্ভাব্য চুক্তিসমূহ
প্রধান উপদেষ্টা চীনের হাইনান প্রদেশে ২৫-২৮ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য বোআও ফোরাম ফর এশিয়া কনফারেন্সে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে, বাংলাদেশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেনি। তবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
সূত্র জানায়, যদি দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়, তবে সফরকালে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে।