সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের চিরবিদায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ এ এম এস আরেফিন সিদ্দিকের জানাজা ও দাফনের দৃশ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ মার্চ 14, 2025 3:52 অপরাহ্ন

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের চিরবিদায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ এ এম এস আরেফিন সিদ্দিকের তিন দফা নামাজে জানাজার পর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।

তিনি বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৬ মার্চ তিনি রমনার ঢাকা ক্লাবে ইফতার কেনার জন্য গেলে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে নিউরো আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়, যেখানে শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তার প্রথম নামাজে জানাজা শুক্রবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডির গ্রিন রোডে অবস্থিত বাইতুল আকসা মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে তার শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা অংশগ্রহণ করেন, যেখানে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানও উপস্থিত ছিলেন।

জানাজার পর দেয়া এক বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক অত্যন্ত বিনয়ী ও সৎ ব্যক্তি ছিলেন। আমরা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। একজন সাবেক উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে যথাযোগ্য সম্মান জানানো হচ্ছে। আমরা তার অসুস্থতার সময় তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।”

তিনি আরও জানান যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জন্য বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দ্বিতীয় নামাজে জানাজা ধানমন্ডির ঈদগাহ মসজিদে জুমার নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয়, এরপর ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার মরদেহ আজিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

অধ্যাপক আবু আহসান মো. শামসুল আরেফিন সিদ্দিক ১৯৫৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি ১৯৮০ সালে এই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি ১৯৮৬ সালে ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। উপাচার্যের দায়িত্ব শেষে তিনি বিভাগে পুনরায় যোগদান করেন এবং ২০২০ সালের জুন মাসে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জানাজা না হওয়া নিয়ে বিতর্ক

অনেক সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা আশা করেছিলেন যে, অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে তিনি দীর্ঘ আট বছর উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশার বিপরীতে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় বা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে তার সহকর্মী ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম ফেসবুকে লেখেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে জানাজা আয়োজনের কোনো নিষেধাজ্ঞা বা অসহযোগিতা ছিল না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস প্রধানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, মরহুম অধ্যাপকের পরিবারের সিদ্ধান্তেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানও এ মন্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলেন, “তার দুটি জানাজার সিদ্ধান্ত তার পরিবারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। দাফনের সিদ্ধান্তও তারা নিয়েছেন। আমরা এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।”

0%
0%
0%
0%