চীনে বাংলাদেশি আম রপ্তানি: শুরু হল “আম কূটনীতি”, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মোড়

চীনে বাংলাদেশি আম রপ্তানি: শুরু হল "আম কূটনীতি"
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ জুন 3, 2025 11:38 অপরাহ্ন

ইলিশের পরে এবার আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে বাংলাদেশ উপস্থাপন করলো আরেকটি রপ্তানি সম্পদ—আম। এবার এই আম শুধু একটি রসালো ফল নয়, বরং একটি সুগন্ধি বার্তা; চীনের বাজারে পা রেখেছে বাংলাদেশি মধুর আম, আর সেই সঙ্গেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে কথিত “আম কূটনীতি”

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি বাংলাদেশ থেকে তাজা আম রপ্তানি হয়েছে চীনে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগান থেকে সরাসরি তিন টন তাজা আম পৌঁছেছে চীনের হুনান প্রদেশের চাংসা শহরেহুয়াংহ হুয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে এক মিনিটও সময় লাগেনি—ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে শিপিং লেভেল পর্যন্ত, বাংলাদেশি প্রস্তুতির ছাপ ছিল চোখে পড়ার মতো।

চীনা কাস্টমস অফিসাররা আম পরীক্ষার পর বলেছেন, “নো ইস্যু, পারফেক্ট কোয়ালিটি।” শুধু ব্যবসা নয়, এই রপ্তানি ঘটনাকে অনেকেই দেখছেন একটি কূটনৈতিক যুগের সূচনা হিসেবে। এক সময় যেসব আম উপহার হিসেবে যেত দিল্লিতে, এখন সেই একই আম কিনে নিচ্ছে বেইজিং, তাও ন্যায্য মূল্যে

বিশ্ববাজারে খ্যাতি রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের—সুগন্ধ, মিষ্টতা আর সূক্ষ্ম গঠনের জন্য। ২০২৪ সালের জুলাইতে চীন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি, যার ফলস্বরূপ এই সফল চালান।

চাংসা কাস্টমস এই আম চালানটি বাস্তবায়নে ডেডিকেটেড ফ্রেশ এক্সপ্রেস ইউনিটকাস্টমাইজড ক্লিয়ারেন্স প্ল্যান গ্রহণ করে যাতে ফল পৌঁছায় একদম টাটকা অবস্থায়।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে দেশে প্রায় ২.৭ মিলিয়ন টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা, যার অন্তত ৫ হাজার টন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই রপ্তানির বড় অংশের লক্ষ্য এখন চীনের বিশাল ভোক্তা বাজার

চীনের ফল আমদানির পরিমাণ ২০২৪ সালে ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলারে। কেমিক্যাল ছাড়াই ব্যাগিং করা নিরাপদ বাংলাদেশি আম এখন চীনা ভোক্তার মন জয় করছে।

এই রপ্তানির পেছনে যিনি মূল প্রভাবক বলে মনে করা হচ্ছে, তিনি হলেন ড. মোহাম্মদ ইউনুস। অনেকেই বলছেন, এটি তার “আম কূটনীতি”, যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা হ্রাস করে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করাই এই কৌশলের মূল লক্ষ্য।

বিশ্লেষকদের মতে, এই রপ্তানি একঝলকেই পরিস্থিতি বদলে দেবে না, তবে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, বাংলাদেশ এখন নিজের মাঠে, নিজের শর্তে খেলছে। আর সেই মাঠের এক কোণে আমের বাক্স থেকে ছড়িয়ে পড়ছে এক নতুন ভূকূটনৈতিক সুবাস


0%
0%
0%
0%