জালালপুরে পদ্মা নদীর ভাঙন: আতঙ্কে শতাধিক পরিবার, দ্রুত বাধ নির্মাণের দাবি

নদী ভাঙ্গনের ছবি
নিজস্ব প্রতিবেদক গোসারহাট
প্রকাশঃ জুলাই 10, 2025 4:29 অপরাহ্ন

শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে পদ্মা নদীর ভাঙন এখন চরম রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালা নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ফলে নদীপাড়ের মানুষ এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পদ্মার এই ভাঙন যেন মৃত্যু নয়, ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারিয়ে যাওয়া। গত এক মাসেই অন্তত পাঁচ থেকে দশটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। কেউ ঠাঁই নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউবা আশ্রয়কেন্দ্রে।

নদীর গর্ভে প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি

আজ বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মার পাড়ে মাটি ভেঙে পড়ছে ক্রমাগত। যেসব ঘর মাত্র এক সপ্তাহ আগেও নিরাপদ অবস্থানে ছিল, সেগুলো এখন ভাঙনের মুখে। স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই এসব ঘরবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,

“এখন তো ভাটা পানি আছে, কিন্তু জোয়ারের সময় পানি অনেক বেড়ে যায়। তখন নদীর গতি আরও তীব্র হয়। আমাগো এলাকা তো একদম ভাঙনের মধ্যে পড়ছে। এইখানে ঘরবাড়ি কিছুই থাকবে না সামনে।”

বন্যার পূর্বাভাসে বাড়ছে উদ্বেগ

আশঙ্কা করা হচ্ছে, সামনের শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন—এই কয়েক মাসে ভাঙনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর এখনো ভাঙন কিছুটা কম হলেও, মূল বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা আগের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।

একজন ভুক্তভোগী বলেন,

“আমরা তো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি, যেকোনো সময় বাড়ি ছাড়তে হতে পারে। ইতিমধ্যে গ্রামের ১৫-২০টা পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।”

সরকারের প্রতিশ্রুতি, বাস্তবায়ন নেই

বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বিশেষ করে নদীর পাড়ে জিওব্যাগ ফেলা কিংবা বাধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানান তারা।

স্থানীয়দের দাবি,

“সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার বলা হয়েছে যে বাধ দেওয়া হবে, বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কিছুই পাই নাই। আমরা চাই, অন্তত আমাদের ভিটেমাটি যেন রক্ষা পায়।”

একমাত্র চাওয়া—দ্রুত বাধ নির্মাণ

জালালপুরবাসীর এখন একটিই চাওয়া—পদ্মা নদীর তাণ্ডব থেকে বাঁচতে দ্রুত কার্যকর বাধ নির্মাণ। নদীপাড়ের শতাধিক পরিবার এখন দিন কাটাচ্ছে উৎকণ্ঠায়, কখন নদী গিলে নেয় তাদের জীবনের সম্বলটুকু।

সরকারের প্রতি জোরালো আবেদন জানিয়ে তারা বলেন,

“আমাদের শেষ আশ্রয়টুকু যেন রক্ষা করা হয়। বাধ নির্মাণই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা।”

পদ্মা নদীর এই ভাঙন যদি দ্রুত রোধ করা না যায়, তাহলে জালালপুরের মতো আরও বহু গ্রাম অচিরেই হারিয়ে যাবে পদ্মার গহ্বরে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

0%
0%
0%
0%