উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তে পাইলটসহ নিহত ১৯, আহত ১৬৪

ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) একটি FT-7 BGI প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় পাইলটসহ অন্তত ১৯ জন নিহত ও ১৬৪ জন আহত হয়েছেন বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এখন পর্যন্ত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং ১৬৪ জন আহত হয়েছেন।”
বিমানটি আজ সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ৬ মিনিটে কুর্মিটোলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এ কে খন্দকার ঘাঁটি থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ তদন্তের পর জানানো হবে বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
দুর্ঘটনার পর আহতদের দ্রুত বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আইএসপিআর আরও জানিয়েছে, পাইলট প্রাণপণ চেষ্টা করেন যাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে কম জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বিমানটি নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিমানটি উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই তলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং আহতদের সর্বাত্মক সহায়তা ও চিকিৎসা প্রদান করছে। এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিমান বাহিনী প্রধান বিদেশে সরকারি সফরে থাকায় সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (প্রশাসন), ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছেন।
সেনাপ্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করছেন।
বিধ্বস্তের পর সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহেদ ঘটনাস্থলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন।
সাহায্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবির তিন প্লাটুন সদস্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
দুর্ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেলের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে জরুরি হটলাইন চালু করা হয়েছে — ০১৯৪৯-০৪৩৬৯৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
মেট্রোরেলের একটি কোচ আহতদের পরিবহনের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. নাসিরউদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত সেখানে ৩০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন।
সরকার এ দুর্ঘটনায় একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) শোক দিবস পালিত হবে। এ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
সারাদেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে আহত ও নিহতদের জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এক বিবৃতিতে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি।”
দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের খোঁজে একাধিক হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে — সেনাবাহিনীর উদ্ধার ব্রিগেড: ০১৭৬৯০২৪২০২, সিএমএইচ বার্ন ইউনিট: ০১৭৬৯০১৬০১৯, সিএমএইচ ইমারজেন্সি: ০১৭৬৯০১৩৩১১, মাইলস্টোন স্কুল প্রশাসনিক কর্মকর্তা: ০১৮১৪৭৭৪১৩২ এবং ভাইস প্রিন্সিপাল: ০১৭৭১১১১৭৬৬।
এছাড়া জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশের জরুরি সেলের মাধ্যমে বার্ন ইউনিটে সংযুক্ত হওয়া যাবে।
এছাড়াও আইন, বিদ্যুৎ, গণপূর্ত, ধর্ম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টারা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
গৃহ উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এ এফ এম খালিদ হোসেনও শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনায় সারাদেশজুড়ে গভীর শোক ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তথ্যসূত্র: BSS