বাংলাদেশ-কাতার বন্ধুত্ব আরও জোরদার: সেনা প্রেরণ ও জ্বালানি চুক্তিতে অগ্রগতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস কাতারে কূটনৈতিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন, কাতারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মুহূর্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ এপ্রিল 22, 2025 4:34 অপরাহ্ন

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যকার সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের সাম্প্রতিক দোহার সফরের মধ্য দিয়ে। এই সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ খাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির ঘোষণা এসেছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, কাতার সরকার বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে ৭২৫ জন সেনা সদস্য গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কুয়েতের অনুরূপভাবে, কাতারও বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে এই সেনা সদস্যদের নেবে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রতি তিন বছর পরপর একটি নতুন ব্যাচ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১৬০০ কিংবা তার বেশি করারও প্রস্তাব দিয়েছে।

প্রেস সচিব আরও জানান, একজন বাংলাদেশি সেনা সদস্য কাতারে নিযুক্ত হলে প্রারম্ভিক বেতন হবে প্রায় আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকা। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সফরের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস কাতারের আমিরের মা এবং কাতার ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন শেখ মোজা বিনতে নাসিরের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়াও কাতারের আমিরের বোন শেখ হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানির সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে চারজন নারী ক্রীড়াবিদও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতা জোরদারে ড. ইউনুসের সফরে কাতারের জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে একটি বড় পরিসরের বৈঠকের কথা রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে কাতারের সঙ্গে একটি দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহ চুক্তিতে আবদ্ধ। তবে বর্তমান সরকার অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে নতুন চুক্তির সম্ভাবনা খুঁজছে। কারণ দেশে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগকারী নতুন শিল্প ও প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী, এবং এলএনজি সংযোগের জন্য ৬০০ এর বেশি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে।

দেনা পরিশোধ সম্পর্কেও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, “পতিত স্বৈরাচার সরকারের রেখে যাওয়া কয়েকশত মিলিয়ন ডলারের দেনা বর্তমান সরকার পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন ডলারের দেনা বাকি রয়েছে, যা এ সপ্তাহের মধ্যেই পরিশোধ করার লক্ষ্য রয়েছে।”

এই সফর ও বৈঠকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

0%
0%
0%
0%