জাপানে নির্বাচনী ধাক্কা: এক্সিট পোল অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে চলেছে শাসক জোট, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আশঙ্কা

জাপানে নির্বাচনী ধাক্কা: এক্সিট পোল অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে চলেছে শাসক জোট, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সংশোধনঃ জুলাই 20, 2025 9:19 অপরাহ্ন

জাপানে নির্বাচনী ধাক্কা : জাপানে অনুষ্ঠিত সদ্য সমাপ্ত উচ্চকক্ষ নির্বাচনের এক্সিট পোল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, শাসক জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। এতে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার ওপর তীব্র রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

রবিবার (২০ জুলাই) দেশের জনগণ উচ্চকক্ষ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, যেখানে মূল্যবৃদ্ধি ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ট্যারিফ হুমকায় ক্ষুব্ধ জনমত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।

ইতিমধ্যেই জাপানের শক্তিশালী নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে শাসক জোট। উচ্চকক্ষেও হার হলে সরকারের নীতি বাস্তবায়নের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এমনকি ইশিবার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠবে।

🔴 কত আসন প্রয়োজন?

২৪৮ আসনের উচ্চকক্ষে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে জোটের প্রয়োজন ৫০টি আসন। সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম NHK-এর এক্সিট পোল বলছে, জোট ৩২ থেকে ৫১টি আসন পেতে পারে—যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে না।

আগে থেকেই পূর্বাভাস ছিল, ইশিবার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং তার ছোট অংশীদার কোমেইতো এই নির্বাচনে বিপদে পড়তে পারে।

NHK-র মতে, “জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পূর্বাভাস সত্ত্বেও, টোকিওতে দলীয় সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশিবা বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে চান।

তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ট্যারিফ আলোচনা করছি… এই আলোচনা নষ্ট করা চলবে না।”

এই নির্বাচনে উচ্চকক্ষের অর্ধেক আসনের জন্য ভোট হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছয় বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।

যদি জোট ৪৬টির কম আসন পায়, তাহলে এটা হবে ১৯৯৯ সালে গঠনের পর থেকে তাদের সবচেয়ে খারাপ ফলাফল।

ইশিবার সংকট

ইশিবার কেন্দ্র-ডানপন্থী দল ১৯৫৫ সাল থেকে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে জাপান শাসন করছে, যদিও নেতৃত্বে বারবার পরিবর্তন এসেছে।

এই ফলাফল প্রমাণ করে, জনগণের মধ্যে ইশিবার প্রতি আস্থা কমছে। অর্থনৈতিক সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার অস্থিরতা তাকে জনগণের চোখে দুর্বল নেতা করে তুলেছে।

বিশেষ করে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়া এবং LDP-র একাধিক কেলেঙ্কারি জনরোষ আরও বাড়িয়েছে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, অতীতে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো শেষ তিনজন এলডিপি প্রধানমন্ত্রী দুই মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করেছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারও এমন কিছু ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

নেতৃত্বে পরিবর্তনের সম্ভাবনা

যদি ইশিবা পদত্যাগ করেন, তাহলে পরবর্তী নেতৃত্বের দৌড়ে থাকতে পারেন:

  • সানায়ে তাকাইচি , যিনি গতবারের নির্বাচনে ইশিবার পর দ্বিতীয় হয়েছিলেন।
  • তাকায়ুকি কোবায়াশি , প্রাক্তন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী।
  • শিনজিরো কোইজুমি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির পুত্র।

নেতৃত্ব পরিবর্তন হলে তা জাপানের রাজনীতিতে নতুন নাটকীয়তা তৈরি করবে, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চলছে।

সানসেইতো-র উত্থান

এবারের নির্বাচনে ডানপন্থী ছোট দল সানসেইতো শাসক জোটের ভোটে বড় চির ধরিয়েছে। ইউটিউবের মাধ্যমে কোভিড-১৯ নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য দিয়ে তারা পরিচিতি পায় এবং “Japanese First” ও অভিবাসন বিরোধী বার্তা দিয়ে অনেক রক্ষণশীল ভোটারকে আকৃষ্ট করেছে।

NHK-র মতে, দলটি এবার ৭টি আসন পেতে পারে।

জাপান ঐতিহ্যগতভাবে অভিবাসনবিরোধী ও আত্মনির্ভর সংস্কৃতির জন্য পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক ও বিদেশি বসবাসকারী প্রবেশ করেছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে বিদেশিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়েছে এবং মূল্যবৃদ্ধির জন্য তাদের দায়ী করা হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা গত সপ্তাহে একটি “বিদেশিদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ ও বিরক্তিকর আচরণ” প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। এর আওতায় অভিবাসন, জমি কেনাবেচা এবং সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে।


জাপানের শাসক জোট উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পথে। প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। মূল্যবৃদ্ধি, অভিবাসন ইস্যু এবং নতুন ডানপন্থী দলের উত্থান জাপানের রাজনীতিকে নতুন দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: BBC NEWS

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%