জ্বর হলে কি করবেন?

ছবি: জ্বরে আক্রান্ত রোগী
জ্বর হল শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার (৯৭°F থেকে ৯৯°F বা ৩৬.১°C থেকে ৩৭.২°C) চেয়ে বেশি তাপমাত্রা, যা আমাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হলে দেখা দেয়। এটি নিজেই কোনো রোগ নয়, বরং শরীরে রোগ বা সংক্রমণ হচ্ছে তার একটি লক্ষণ।
একটি উদাহরণ চিন্তা করুন – আপনি যদি কাঁটায় পা দেন, সেখানে ইনফেকশন হলে শরীর নিজে সেই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে। এই লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। এটিই জ্বর।
🔍 জ্বর হওয়ার প্রধান কারণগুলো কী কী?
১. ভাইরাল সংক্রমণ (Viral Infection)
- সাধারণ সর্দি-কাশি
- ইনফ্লুয়েঞ্জা (Flu)
- করোনা ভাইরাস
- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া
২. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Infection)
- টনসিল ইনফেকশন
- ইউরিন ইনফেকশন (UTI)
- টাইফয়েড জ্বর
- ফুসফুসের ইনফেকশন (Pneumonia)
৩. পরজীবী সংক্রমণ
- ম্যালেরিয়া
- অ্যামোইবিক ডিজেন্ট্রি
৪. অন্যান্য
- গাঁটে ব্যথা বা ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ
- টিউমার বা ক্যান্সার
- শিশুদের টিকা নেয়ার পর জ্বর
🧭 জ্বরের উপসর্গগুলো কীভাবে চিনবেন?
জ্বরের সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- শরীর কাপুনি দিয়ে ঠান্ডা লাগা
- মাথাব্যথা
- চোখে ব্যথা বা জ্বালা
- গায়ে ব্যথা, বিশেষ করে মাংসপেশীতে
- দুর্বল লাগা
- অতিরিক্ত ঘাম
- খাবারে অনীহা
- শিশুদের ক্ষেত্রে কান্নাকাটি ও খাওয়ার অনীহা
⚠️ যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে কারো জ্বরের সঙ্গে চোখে রক্ত জমে গেছে, গায়ে র্যাশ উঠছে বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হচ্ছে—তাহলে তা গুরুতর হতে পারে।
✅ জ্বর হলে ঘরোয়া করণীয় (Home Remedies):
১. 🛏️ শরীরকে বিশ্রাম দিন
জ্বর মানেই শরীর যুদ্ধ করছে। কাজ, দৌড়ঝাঁপ নয়—চুপচাপ বিছানায় বিশ্রাম নিন।
২. 💧 পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন
জ্বর হলে ঘাম বেশি হয়, ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই:
- বিশুদ্ধ পানি
- ডাবের পানি
- ওআরএস
- স্যুপ, জাউ, ভাতের মাড়
খেতে থাকুন প্রতি ঘণ্টায় একটু একটু করে।
৩. 🌬️ শরীর ঠান্ডা রাখুন
- হালকা পাতলা জামা পরুন
- কপালে ঠান্ডা পানি ভেজানো তোয়ালে দিন
- গরম পানি বা বরফ নয়, শুধু ঠান্ডা পানি (ঘরের তাপমাত্রার) ব্যবহার করুন
- ঘর যেন সুনিশ্চিতভাবে বায়ু চলাচলপূর্ণ হয়
৪. 🍽️ হালকা খাবার খান
- নরম ভাত, খিচুড়ি, স্যুপ
- ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
💊 কোন ওষুধ খাবেন?
🔹 Paracetamol
- সবচেয়ে নিরাপদ
- প্রাপ্তবয়স্ক: ৫০০ – ১০০০ মি.গ্রা. (প্রয়োজনে ৬ ঘণ্টা পর)
- শিশু: ওজন অনুযায়ী ডোজ (প্রতি কেজিতে ১৫ মি.গ্রা.)
- খালি পেটে নয় – হালকা খাবারের পর খাওয়া উত্তম
🔹 Ibuprofen
- শরীর ব্যথা থাকলে কার্যকর
- তবে পেটের সমস্যা থাকলে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়াই ভালো
🚫 অ্যান্টিবায়োটিক: নিজে থেকে খাবেন না। শুধুমাত্র যদি সংক্রমণ নিশ্চিত হয় এবং ডাক্তার বলেন তবেই খাবেন।
🚨 যেসব ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা প্রয়োজন:
- জ্বর ৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়
- ১০২°F এর বেশি হয় ও কমে না
- জ্বরের সঙ্গে অজ্ঞান হওয়া, খিচুনি, কথা জড়িয়ে যাওয়া
- চোখ লাল বা ফোলা, র্যাশ বা রক্তপাত দেখা দিলে
- বাচ্চারা খেতে না চাইলে, একটানা ঘুমালে বা কাঁদলেও সাড়া না দিলে
👨⚕️ ডাক্তার দেখানো উচিত কোন অবস্থায়?
উপসর্গ | কোন ডাক্তার |
---|---|
সাধারণ ভাইরাল জ্বর | মেডিসিন স্পেশালিস্ট |
শিশুদের জ্বর | শিশু বিশেষজ্ঞ (Pediatrician) |
ডেঙ্গু, টাইফয়েড সন্দেহ | ইনফেকশন রোগ বিশেষজ্ঞ |
চোখ লাল বা ফোলা, র্যাশ | চর্মরোগ ও মেডিসিন |
🛑 জ্বর হলে যা করবেন না:
- গরম কাপড়ে পুরো শরীর মুড়িয়ে ফেলা
- গুজব শোনা ও নিজের মতো করে ওষুধ খাওয়া
- বারবার প্যারাসিটামল খাওয়া
- শিশুর ক্ষেত্রে বড়দের ওষুধ দেওয়া
- পানি ও খাবার বন্ধ করে রাখা
জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, এটি একটি লক্ষণ—শরীরে অন্য কিছু ঘটছে তার ইঙ্গিত। অনেক সময় ঘরোয়া চিকিৎসা ও বিশ্রামেই জ্বর ভালো হয়ে যায়, আবার কখনো এটি হতে পারে গুরুতর কোনো রোগের সংকেত। তাই সাবধান হোন, নিজের শরীরের দিকে মনোযোগ দিন, এবং প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।