রাশিয়া যুদ্ধবিরতি না মানায় পেছাল ট্রাম্প, বন্ধ বুদাপেস্ট বৈঠকের প্রস্তুতি
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক বাতিল, শান্তি আলোচনা স্থগিত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকের পরিকল্পনা স্থগিত হওয়ার পর তিনি কোনো “অর্থহীন বৈঠক” করতে চান না।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় প্রধান অন্তরায় হচ্ছে রাশিয়ার বর্তমান যুদ্ধরেখা বরাবর লড়াই বন্ধে অস্বীকৃতি।
এর আগে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, “নিকট ভবিষ্যতে” ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই। যদিও গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, দুই নেতার মধ্যে দুই সপ্তাহের মধ্যে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বৈঠক হবে।
তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শান্তি প্রস্তাবের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠায়, এই শীর্ষ বৈঠকের সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত আগস্টে আলাস্কায় আকস্মিক এক বৈঠকে ট্রাম্প ও পুতিন মুখোমুখি হয়েছিলেন, তবে সেই আলোচনায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। ফলে, হোয়াইট হাউস এবার দ্বিতীয় বৈঠক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—যাতে আগের মতো “ফলহীন বৈঠক” আর না হয়।
একজন জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, “রাশিয়ানরা অনেক বেশি কিছু চাইছিল। ট্রাম্পের জন্য কোনো লাভজনক চুক্তি সম্ভব নয়—এটা আমেরিকানদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে এই সপ্তাহে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তাদের মধ্যে একটি “ফলপ্রসূ ফোনালাপ” হয়েছে, তাই আলাদা বৈঠক আর প্রয়োজন নেই।
এরই মধ্যে সোমবার ট্রাম্প কিয়েভ ও ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে মত দেন, যা বর্তমান যুদ্ধরেখা বরাবর সংঘাত থামানোর আহ্বান জানায়।
তিনি বলেন, “যেখান থেকে লড়াই চলছে, সেখানেই থামাও। সবাই ঘরে ফিরে যাও। যুদ্ধ থামাও, মানুষ হত্যা বন্ধ করো।”
তবে মস্কো বারবার এই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে আসছে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তন হয়নি”—রাশিয়া এখনও পূর্ব ইউক্রেন থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পূর্ণ প্রত্যাহার দাবি করছে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভও মঙ্গলবার বলেন, “রাশিয়া কেবল দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল শান্তিতে আগ্রহী।” তার ভাষায়, বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর যুদ্ধবিরতি মানে হবে “শুধু সাময়িক বিরতি”, যা স্থায়ী শান্তি নয়।
লাভরভ আরও বলেন, “সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান করতে হবে”—যা রুশ পক্ষের ভাষায় মানে হচ্ছে দনবাসে পূর্ণ রুশ সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি ও ইউক্রেনের সামরিকীকরণ বন্ধ করা—যা কিয়েভ ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
অন্যদিকে ইউরোপীয় নেতারা ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যৌথ বিবৃতিতে বলেন, যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো আলোচনার সূচনা হতে হবে বর্তমান ফ্রন্টলাইন থেকে, এবং রাশিয়া এখনও “শান্তির ব্যাপারে সিরিয়াস নয়”।
জেলেনস্কি জানান, ফ্রন্টলাইন নিয়ে আলোচনা হলো “কূটনীতির শুরু”, কিন্তু রাশিয়া সেটি এড়িয়ে চলছে। তার মতে, রাশিয়াকে আলোচনায় আনতে একমাত্র উপায় হচ্ছে ইউক্রেনকে দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র সরবরাহ।
ট্রাম্প সম্প্রতি পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে বুদাপেস্টে বৈঠকের প্রস্তাব দেন, এর একদিন পরেই হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করেন। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আলোচনায় ট্রাম্প জেলেনস্কিকে দনবাস অঞ্চলের অংশবিশেষ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে চাপ দিয়েছিলেন, যা ইউক্রেনীয় পক্ষের তীব্র আপত্তির কারণ হয়।
জেলেনস্কি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, দনবাসের যে অংশ ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা কখনোই ছেড়ে দেওয়া যাবে না—কারণ রাশিয়া ভবিষ্যতে সেই অঞ্চল থেকেই নতুন আক্রমণ চালাতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের আকস্মিক ফোনালাপের পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য “টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র” সরবরাহের সিদ্ধান্ত, যা রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম।
জেলেনস্কি বলেছেন, “টমাহক নিয়ে আলোচনাই রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে বাধ্য করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও আমরা কোনো তাৎক্ষণিক চুক্তি পাইনি, তবে এই আলোচনা ছিল কূটনীতিতে এক শক্তিশালী বিনিয়োগ।”
