যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ডমাস্টার ড্যানিয়েল নারোদিতস্কি আর নেই, ২৯ বছর বয়সে প্রয়াণ

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় দাবাড়ু, ধারাভাষ্যকার ও অনলাইন শিক্ষক ড্যানিয়েল নারোদিতস্কি আর নেই। মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শার্লট চেস সেন্টার তাঁর পরিবারের বরাতে নারোদিতস্কির আকস্মিক মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে মৃত্যুর কারণ প্রকাশ করা হয়নি।
ক্লাবের বিবৃতিতে বলা হয়েছে—
“অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ড্যানিয়েল নারোদিতস্কির অপ্রত্যাশিত মৃত্যু ঘটেছে। তিনি ছিলেন প্রতিভাবান দাবাড়ু, ধারাভাষ্যকার ও শিক্ষক, এবং দাবা সম্প্রদায়ের এক প্রিয় মুখ—যাকে সারা বিশ্বের দাবা অনুরাগীরা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করেন।”
দাবা দুনিয়ার শোক
নারোদিতস্কির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র দাবা ফেডারেশন ও আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন । যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব র্যাংকিংয়ে দুই নম্বর দাবাড়ু হিকারু নাকামুরা বলেছেন,
“এই খবর শুনে আমি ভীষণ মর্মাহত। দাবা জগতের জন্য এটি এক বিশাল ক্ষতি।”
অনলাইন জনপ্রিয়তা ও শিক্ষাদান
গ্র্যান্ডমাস্টার হিসেবে উচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নারোদিতস্কি অনলাইন দাবা জগতে ছিলেন এক অনন্য মুখ। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ, আর টুইচ -এ তাঁর ৩ লাখ ৪০ হাজারের বেশি অনুসারী ছিল। সেখানে তিনি নিয়মিত দাবার শিক্ষা, বিশ্লেষণ ও সরাসরি খেলার লাইভস্ট্রিম করতেন।
দাবা প্রেমীরা তাঁকে স্নেহভরে ডাকতেন “দানিয়া” নামে। ফিডে জানিয়েছে—
“নারোদিতস্কি অনলাইন দাবা কনটেন্টকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।”
শৈশবে দাবার সূচনা
মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর বড় ভাই অ্যালান নারোদিতস্কির হাত ধরে দাবার সঙ্গে পরিচয় হয় ড্যানিয়েলের। জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য ভাই তাঁকে খেলা শেখাতে বসেন—সেখান থেকেই শুরু।
পিতা ভ্লাদিমির নারোদিতস্কি ও কয়েকজন কোচ দ্রুত বুঝতে পারেন, শিশুটি অসাধারণ প্রতিভাবান। পরে এক সাক্ষাৎকারে ড্যানিয়েল বলেন,
“আমার কাছে তখন এটা ছিল ভাইয়ের সঙ্গে খেলা, কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম দাবা আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।”
কিশোর বয়সেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন
২০০৭ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তুরস্কের আন্তালিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জয় করেন তিনি।
২০১০ সালে, মাত্র ১৪ বছর বয়সে, তিনি লেখেন ‘মাস্টারিং পজিশনাল চেস’নামের বই—যেখানে বাস্তবিক কৌশল ও বোর্ডে চালচলনের সূক্ষ্ম দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হয়।
২০১৩ সালে তিনি জয় করেন যুক্তরাষ্ট্র জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ, যা তাকে এনে দেয় গ্র্যান্ডমাস্টার উপাধি—দাবা দুনিয়ার সর্বোচ্চ সম্মাননা।
পড়াশোনা ও পেশাজীবন
পরবর্তীতে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের শার্লটে দাবা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
২০২২ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে তাদের নতুন ‘চেস কলামনিস্ট’ হিসেবে নিয়োগ দেয়। সেখানে তিনি নিয়মিত দাবার ধাঁধা, বিশ্লেষণ ও শিক্ষামূলক লেখালেখি করতেন।
দাবার প্রতি ভালোবাসা
সেই সময়ের এক সাক্ষাৎকারে নারোদিতস্কি বলেন—
“আমার স্তরের খেলোয়াড় হয়েও আমি প্রতিবার নতুন কিছু শিখি। দাবার সৌন্দর্য এখানেই—প্রতিটি খেলা, প্রতিটি অনুশীলন বা শেখানোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে নতুন আবিষ্কার।”
