গাজায় এক কেজি আটা ২৩০০ টাকা, ক্ষুধায় মৃত্যুর মুখে শিশু-কিশোরেরা

ছবিঃ সংগ্রহকৃত
গাজার একটি ফুলের বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতা-বিক্রেতাদের চোখে মুখে উদ্বেগ আর নিরব কষ্ট। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডে আটা এখন যেন সোনার চেয়েও দামী। প্রতিদিন মাত্র এক কেজি আটা কিনে শিশুদের জন্য খাবার জোগাড় করছেন এক হতাশ মা। তিনি বলেন, “আমি কিছু বলতেও পারছি না এই যুদ্ধ নিয়ে। প্রতিদিন এক কেজি আটা কিনি আমার ছোট সন্তানদের জন্য। দুর্ভিক্ষে অনেক শিশু মারা গেছে, অপুষ্টিতেও অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। আমরা চাই, বিশ্বের সব দেশ এসে নিজের চোখে দেখুক—গাজার মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে। তারা অনুভব করে না, কিন্তু আমরা প্রতিদিন যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। আমরা সব জাতির প্রতি এবং জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাই—গাজার মানুষদের সাহায্য করুন।”
বিশ্বব্যাপী এক কেজি আটার গড় দাম যেখানে মাত্র $১.৫০ (প্রায় ১৭০ টাকা), সেখানে ইসরায়েলের অবরোধে আটার দাম গাজায় পৌঁছেছে $২০ (প্রায় ২,৩০০ টাকা) পর্যন্ত। এক অসহায় পিতা জানান, “আমার একমাত্র ছেলে, আমার একমাত্র সন্তান, গত দশ দিন ধরে আমাকে আটা কিনে দিতে অনুরোধ করছে। শেষ পর্যন্ত আমি টাকা জোগাড় করে মাত্র এক কেজি আটা কিনেছি—শুধু যেন সে মারা না যায়।”
ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় একজন কর্মীর গড় দৈনিক আয় ছিল প্রায় $১৮। কিন্তু এখন সবকিছু ভেঙে পড়েছে। গাজার অর্থনীতি বিধ্বস্ত, জীবন এখন শুধুই টিকে থাকার লড়াই আর সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
এক বিধবা নারী বলেন, “বিধবা বলে আমাকে কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে আমি কিছু আটা কিনেছি, যা আশা করি তিন দিন চলবে। বাকি দিনগুলোর জন্য কমিউনিটি কিচেনের ওপর নির্ভর করবো। জানি না কী করবো। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন এই যুদ্ধ শেষ হয়।”
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা (UNRWA)-র ওপর ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্থাটি গাজার মানুষের জন্য ছিল একমাত্র জীবনরক্ষাকারী বাহন। এক নারী বলেন, “আটা যদি তিন ডলারও হতো, তাহলেও আমি কিনতে পারতাম না। আমাদের জন্য এখনকার বাস্তবতা অন্যায্য। যদি ত্রাণ সরাসরি UNRWA-র মাধ্যমে না আসে, তাহলে আমরা কিছুই পাবো না—না আমি, না অন্য কেউ।”
ইসরায়েল জাতিসংঘের সাহায্য গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত Gaza Humanitarian Foundation এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত সাহায্য দিতে ব্যর্থ। বোমার আঘাত ছাড়াও, এখন গাজার মানুষের প্রধান আতঙ্ক হচ্ছে—ক্ষুধায় মৃত্যু।