যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীনের উদ্ভাবন ও অংশগ্রহণ বিশ্বমঞ্চে জোরালো বার্তা দিচ্ছে

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন এক্সপোতে চীনের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চালিকাশক্তি হিসেবে ভূমিকা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এক্সপোতে ৭০টিরও বেশি দেশের ৬৫০টি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে, যাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এক্সপোর উদ্বোধনী বক্তৃতায় মার্কিন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং চীনের উদ্ভাবন ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “চীনের দ্রুতগতির উদ্ভাবনের নায়ক হচ্ছে এখানকার গবেষক, ডেভেলপার ও উদ্যোক্তারা। আজ চীনে এনভিডিয়ার ওপর নির্ভর করে ১৫ লাখের বেশি ডেভেলপার তাঁদের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বাস্তবায়ন করছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে এনভিডিয়ার তৈরি H20 মডেলের AI চিপ চীনে বিক্রির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে দুটি দেশের মধ্যে বিরল খনিজ পদার্থ নিয়ে বাণিজ্য আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। যদিও এই চিপগুলো এনভিডিয়ার অন্যান্য উচ্চপ্রযুক্তি চিপের তুলনায় কম উন্নত এবং মূলত চীনা বাজারের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনের দাবি, এই নিয়ন্ত্রণ মূলত চীনের সামরিক ব্যবহারের ঝুঁকি রোধে করা হয়েছে। কিন্তু বেইজিং বলছে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চীনা কোম্পানিগুলোর অগ্রগতি রোধে করা হয়েছে। চীনের অভিযোগ, “এমন আচরণ বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করে এবং কোনো পক্ষেরই স্বার্থে নয়।”
এই এক্সপোর অন্যতম কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। চীনা সরকার অর্থনীতিকে উন্নত স্তরে উন্নীত করতে এবং সস্তা উৎপাদন নির্ভরতা থেকে সরে আসার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর জোর দিচ্ছে।
এক প্রযুক্তি বিশ্লেষক বলেন, “চীনের সরকারই বিশ্বের একমাত্র সরকার যারা এত জোরালোভাবে AI অ্যাপ্লিকেশনকে এগিয়ে নিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হোক বা আমেরিকা— তারা মূলত AI’র কারণে কর্মসংস্থান হারানোর ভয়েই পিছিয়ে যাচ্ছে। বরং তারা অনেক সময় এই প্রযুক্তির বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছে।”
চীনা কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা চীনা কোম্পানিগুলোকে আরো প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে বাধ্য করছে। এক কর্মকর্তা বলেন, “চাপ যেখান থেকেই আসুক না কেন, কোম্পানি ও শিল্প খাতের উন্নয়ন একমাত্র সম্ভব উদ্ভাবনের মাধ্যমে।”
এই এক্সপোর মাধ্যমে বেইজিং এক স্পষ্ট বার্তা দিতে চাচ্ছে যে, চীন হলো বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের মূল স্তম্ভ এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মতাদর্শের বিপরীতে চীন ‘অপরিবর্তনযোগ্য’। অংশগ্রহণকারী অনেক কোম্পানি এই বার্তার সাথে একমত।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক এখনো উত্তপ্ত, এবং এই বাস্তবতা বিশ্ব বাণিজ্যের ভবিষ্যৎকে করে তুলেছে আরো অনিশ্চিত।
তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ও এক্সপো প্রতিবেদক দল