ক্লাব বিশ্বকাপে পোর্তোকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লেন মেসি, ইন্টার মায়ামির হয়ে করলেন ৫০তম গোল

ছবিঃ লিওনেল মেসি
ইন্টার মায়ামির হয়ে নিজের ৫০তম গোলটি করলেন লিওনেল মেসি, আর সেই সাথেই প্রথমবারের মতো ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে জয়ের স্বাদ পেলো যুক্তরাষ্ট্রের এই ক্লাবটি। পোর্তোর বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২-১ গোলের জয় তুলে নেয় মায়ামি।
পোর্তোর দ্রুত গোল এবং প্রথমার্ধের দাপট
খেলার শুরুতেই অঘটনের আভাস দিয়েছিল পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তো। ম্যাচের মাত্র ৮ মিনিটেই স্যামু আগেহাওয়া স্পট কিক থেকে গোল করে এগিয়ে নেন দলকে। ইন্টার মায়ামির গোলরক্ষক অস্কার উস্তারি বলটি আটকানোর চেষ্টা করলেও তা তার বাহুর নিচ দিয়ে জালে প্রবেশ করে।
প্রথমার্ধে পোর্তোর আধিপত্য আরও স্পষ্ট হয়, কিন্তু ফ্রান্সেস্কো মৌরার একটি শট গোললাইন থেকে সেভ করেন ডিফেন্ডার এবং অ্যালান ভারেলা পোস্টে আঘাত করেন।
মায়ামির প্রত্যাবর্তন: সেগোভিয়া ও মেসির ম্যাজিক
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের রূপ পাল্টে দেন তেলাসকো সেগোভিয়া। মার্সেলো ওয়েইগান্টের কাটা বল থেকে একটি দুর্দান্ত শটে বল জড়ান গোলবারের ওপর কোণে।
এরপর আসে সেই মুহূর্ত, যার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। লিওনেল মেসি তার চিরচেনা ফ্রি-কিক স্টাইলে বল জালে পাঠান—দেয়ালের ওপর দিয়ে, গোলরক্ষক ক্লাউদিও রামোসের নাগালের বাইরে। এই গোলটিই হয়ে ওঠে ম্যাচ জয়ের সীলমোহর।
৩৭ বছর বয়সী মেসি ম্যাচের কিছুক্ষণ আগে দূর থেকে একটি ফ্রি-কিকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। তবে যখন তিনি পেলেন আরেকটি সুযোগ, একদম ‘ডি’ এর প্রান্ত থেকে—তিনি মাপা শটে বল জড়ালেন জালে। এটি ছিল তার ৬৮তম ফ্রি-কিক গোল।
মূল আলোকপাত: মেসির ইউরোপ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনার জবাব
২০২৩ সালের জুলাইয়ে মেসি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন যে, ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো ছেড়ে তিনি খুব তাড়াতাড়িই যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছেন।
তবে গত মৌসুমে প্যারিস সেন্ট-জার্মেইর হয়ে ৪১ ম্যাচে ২১ গোল করা মেসি এখন পর্যন্ত ইন্টার মায়ামির হয়ে ৬১ ম্যাচে করেছেন ৫০ গোল।
এই ম্যাচেই তার পারফরম্যান্স দেখিয়ে দিলেন—তিনি এখনো ইউরোপীয় বড় দলের বিপক্ষে আলো ছড়ানোর ক্ষমতা রাখেন।
এই গোলের মাধ্যমে মেসি ক্লাব বিশ্বকাপে ৬টি গোল করে গ্যারেথ বেল ও করিম বেনজেমার সঙ্গে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছেন। শীর্ষে রয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (৭ গোল)।
কে আলো ছড়ালেন আর কে ব্যর্থ হলেন?
সার্জিও বুসকেটস, যিনি আর মাত্র এক মাস পর ৩৭ বছরে পা রাখবেন, তিনিও মাঝমাঠে দুর্দান্ত প্রভাব রাখেন।
তিনবারের ক্লাব বিশ্বকাপজয়ী এই মিডফিল্ডার তুলনামূলক অনেক কমবয়সী খেলোয়াড়দের বিপক্ষে ছিলেন সেরা।
এই ম্যাচে শুধু তার সতীর্থ বেনজামিন ক্রেমাসচিই (৫টি) তার চেয়ে বেশি সফল ট্যাকল করেছেন (বুসকেটস ৩টি)। পাসের দিক থেকেও তিনি ছিলেন শীর্ষে—৭৪টি পাসের মধ্যে ৯৪.৫% সফল। শুধু পোর্তোর ফাবিও ভিয়েরা (৮০টি পাস) তাকে ছাড়িয়ে গেছেন।
উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান
- মেসি ক্লাব বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে করেছেন ৬টি গোল।
- বার্সেলোনার হয়ে তিনি ৫টি গোল করেন, যার মধ্যে তিনটি এসেছে তিনটি ফাইনালে—২০০৯, ২০১১ ও ২০১৫ সালের।
- এবার ইন্টার মায়ামির হয়েও পেলেন গোলের দেখা।
পরবর্তী সূচি: কারা যাবে শেষ ষোলোতে?
গ্রুপ-এ এর শেষ রাউন্ডের সব খেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ২টায়।
ইন্টার মায়ামি (৪ পয়েন্ট) খেলবে গ্রুপের শীর্ষে থাকা পালমেইরাসের (৪ পয়েন্ট) বিপক্ষে ফ্লোরিডায়।
অন্যদিকে, মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে পোর্তো মুখোমুখি হবে মিশরের আল আহলির বিপক্ষে নিউ জার্সিতে।
ড্র করলেই ইন্টার মায়ামি ও পালমেইরাস চলে যাবে শেষ ষোলোতে। পোর্তোর যেতে হলে জয়ের পাশাপাশি আশা করতে হবে অন্য ম্যাচে একটি দল হারুক।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়:
খেলোয়াড় | গড় রেটিং | দল |
---|---|---|
লিওনেল মেসি (নম্বর: ১০) | ৭.৬৭ | ইন্টার মায়ামি |
অস্কার উস্তারি (নম্বর: ১৯) | ৭.০৭ | ইন্টার মায়ামি |
লুইস সুয়ারেজ (নম্বর: ৯) | ৭.০৬ | ইন্টার মায়ামি |
সার্জিও বুসকেটস (নম্বর: ৫) | ৬.৯৬ | ইন্টার মায়ামি |
তেলাসকো সেগোভিয়া (নম্বর: ৮) | ৬.৯১ | ইন্টার মায়ামি |
ক্রিকেটপ্রেমীদের দেয়া গড় রেটিং অনুসারে স্কোর গঠিত হয়েছে।