এডওয়ার্ড কলেজের হলের নাম বদলে সমালোচনার ঝড়, ‘সুচিত্রা সেন’ নাম বাতিলে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতি অঙ্গন

এডওয়ার্ড কলেজের হলের নাম বদলে সমালোচনার ঝড়, ‘সুচিত্রা সেন’ নাম বাতিলে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতি অঙ্গন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশঃ মে 23, 2025 1:15 অপরাহ্ন

পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের তিনটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন নিয়ে জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা। বিশেষ করে সুপরিচিত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের নামে নামকরণকৃত ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করে “জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস” রাখার সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) পাবনার অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ মধু বলেন,

“এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়। সুচিত্রা সেন উপমহাদেশের একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী এবং পাবনাবাসীর গর্ব। তিনি সব ধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে অবস্থান করতেন। তাই তাঁর নামে থাকা ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এ সিদ্ধান্ত শুধু লজ্জাজনকই নয়, বরং এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা চাই, ছাত্রীনিবাসটি পুনরায় সুচিত্রা সেনের নামেই বহাল থাকুক।”

পাবনার প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক ও পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সভাপতি গোপাল সান্যাল তার ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন,

“পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাসের নাম বদলের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি বিশ্বাস করি, পাবনার সংস্কৃতিপ্রেমী জনতা এই সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে।”

একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদ, পাবনার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন

“শিল্প-সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই এই ছাত্রীনিবাসের নাম রাখা হয়েছিল। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীর নাম বাদ দিয়ে অন্য কারও নামে হলের নামকরণ নিঃসন্দেহে একটি গর্হিত ও দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনাকে অপমান করার শামিল।”

তবে কলেজ প্রশাসনের ব্যাখ্যা ভিন্ন। এডওয়ার্ড কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আব্দুল আউয়াল মিয়া বলেন, “যখন প্রথম সুচিত্রা সেনের নামে হলটির নামকরণ হয়, তখন একাডেমিক কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য এই নামের বিরোধিতা করেছিলেন। তৎকালীন অধ্যক্ষ বলেছিলেন, এটি পার্শ্ববর্তী একটি দেশের চাপের ফল। তখন একটি রাজনৈতিক চাপে পড়েই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”

তিনি আরও বলেন,

“বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ পর্যন্ত কোনো ছাত্রীনিবাস বা হল কোনো চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর নামে নামকরণ করা হয়নি। সুচিত্রা সেন বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন না। এডওয়ার্ড কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে এমন একটি ব্যতিক্রমী নামকরণ নিয়ে তখনও তীব্র আপত্তি উঠেছিল।”

বর্তমান অধ্যক্ষ জানান,

“নতুন প্রশাসনের অধীনে এবং বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একাডেমিক কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আবাসিক ছাত্রীদের মতামত এবং ছাত্র সংগঠনের সম্মতির ভিত্তিতে ‘জুলাই ৩৬ ছাত্রীনিবাস’ নামটি চূড়ান্ত করা হয়।”

তিনি বলেন,

“এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া হয়েছে। যারা বর্তমানে এর বিরোধিতা করছেন, তারা একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শিক বলয়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন, যা বৃহত্তর শিক্ষার্থী সমাজের অভিমত নয়।”

প্রসঙ্গত, একই প্রক্রিয়ায় কলেজের আরও দুটি হলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। শেখ রাসেল ছাত্রাবাসের নতুন নাম রাখা হয়েছে “বিজয় ২৪ হল” এবং বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীনিবাসের নতুন নাম রাখা হয়েছে “আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছাত্রীনিবাস”।

নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পাবনায় সংস্কৃতি ও প্রশাসনের মধ্যে নতুন করে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।

0%
0%
0%
0%