পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সংযম দেখিয়ে প্রশংসিত সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল খলিল

রাজধানীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার সংযম ও দায়িত্বশীল আচরণ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজিত ছাত্রদের সামনে শান্তভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন তিনি।
জানা যায়, ওই সেনা কর্মকর্তার নাম লেফটেন্যান্ট কর্নেল খলিল। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের সময় তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিজের অবস্থানে অনড় থেকে সংযমের পরিচয় দেন।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেটিজেনরা প্রশংসা করতে থাকেন তার দৃঢ়তা ও পেশাদার আচরণের জন্য। পাশাপাশি, তার ইউনিফর্মে থাকা বিভিন্ন ব্যাজ ও ইনসিগনিয়া নিয়েও শুরু হয় আলোচনা—যেগুলো তার অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ও সাহসিকতার প্রতীক।
কোন ব্যাজ কী নির্দেশ করে?
লেফটেন্যান্ট কর্নেল খলিলের কাঁধে থাকা শাপলা ও তারকা ইনসিগনিয়া নির্দেশ করে তিনি একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এই পদে সাধারণত একজন কর্মকর্তা একটি ব্যাটালিয়নের নেতৃত্ব দেন এবং ফরমেশন লেভেলে সিনিয়র স্টাফ অফিসার বা প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার বুকের ডান পাশে থাকা প্যারাকমান্ডো ব্যাজ নির্দেশ করে, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষায়িত বাহিনী প্যারাকমান্ডোর সদস্য। এই ব্যাজ অর্জনের জন্য পাস করতে হয় কঠোর শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ। প্যারাসুট ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের পেছনে ঢুকে অভিযান চালানোই এই বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব।
বাম পাশে থাকা ‘চিতা’ ব্যাজ নির্দেশ করে তিনি প্রথম প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্য, যার সদর দপ্তর সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত। ১৯৯২ সালে গঠিত এই ইউনিটটি দ্রুত ও উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন অভিযানে বিশেষজ্ঞ।
তার ইউনিফর্মে থাকা এয়ারবর্ন ইনসিগনিয়া জানান দেয় তিনি উচ্চতর প্যারাসুট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। এর জন্য ফ্রিফলসহ নানা দুঃসাহসিক কোর্স পাস করতে হয়, যা একজন সেনা কর্মকর্তার শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তার পরিচয় বহন করে।
বাহুর বাম পাশে থাকা নবম ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের ব্যাজ তার ঢাকায় কর্মরত অবস্থান নিশ্চিত করে। এই ডিভিশন রাজধানী ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত সেনাবাহিনীর অন্যতম কৌশলগত ইউনিট, যার আওতায় রয়েছে পদাতিক, মেকানিক্যাল, আর্টিলারি ও কম্পোজিট ব্রিগেড।
জানা গেছে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল খলিল পূর্বে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে একজন ইন্সট্রাক্টর ও প্যারাট্রুপিং প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া
নেটিজেনরা বলছেন, “আসল শক্তি বন্দুক নয়, আসল শক্তি সংযম ও মানবিকতা।” অনেকে মন্তব্য করেছেন, “এই ধরনের কর্মকর্তারাই আমাদের গর্ব।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল খলিলের মানবিক ও দায়িত্বশীল আচরণ কেবল সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারক নয়, বরং একটি সমাজের জন্য অনুসরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তিনি প্রমাণ করেছেন, একটি দেশের রক্ষাকবচ হিসেবে শুধুই অস্ত্র নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পেশাদারিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ।