নিখোঁজ থেকে নাটকীয় উদ্ধার—কী হয়েছিল মাহিরার সঙ্গে?

নিখোঁজ থেকে নাটকীয় উদ্ধার—কী হয়েছিল মাহিরার সঙ্গে?
নিজস্ব প্রতিবেদক সাভার
প্রকাশঃ জুলাই 1, 2025 12:02 অপরাহ্ন

২৯ জুন, রবিবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন এক শিক্ষার্থী, মাহিরা বিনতে মারুফ। মিরপুর বাংলা কলেজে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই হাজার হাজার নেটিজেন তাকে খুঁজে পেতে একযোগে প্রচার চালাতে থাকেন। কেউ পোস্ট দেন, কেউ সম্ভাব্য অবস্থানের খোঁজে তথ্য শেয়ার করেন। কিন্তু রাত গড়াতেই আলোচনার মোড় নেয় অন্যদিকে—প্রশ্ন উঠে যায় পুরো ঘটনার স্বাভাবিকতা নিয়ে। শুরু হয় সমালোচনা, ট্রল, এমনকি অভিযোগ—‘মাহিরা প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়েছিলেন।’

তবে সত্যিই কি মাহিরা পালিয়ে গিয়েছিলেন, নাকি ঘটনার পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর কোনো বাস্তবতা?

নিখোঁজের সকাল

মাহিরা ২৯ জুন সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বের হন মিরপুর বাংলা কলেজে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরীক্ষার পর থেকেই মাহিরার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তার বাবা-মা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট হতে থাকে “নিখোঁজ শিক্ষার্থী মাহিরা” নামে তথ্যচিত্র।

রহস্যময় উদ্ধার ও তার বর্ণনা

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়। রাতের দিকে জানা যায়, মাহিরাকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব। তার ভাষ্যমতে, এক অচেনা নারী তাকে অপহরণ করেছিলেন। মাহিরা বলেন, “সেই নারী আমার নাকের কাছে কিছু ধরতেই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি সাভারের এক নির্জন জায়গায় পড়ে আছি। সামনে ধানক্ষেত, নিস্তব্ধ পরিবেশ, বুক ভরা ভয়।”

তিনি আরও জানান, কিছুক্ষণ পর সেই নারী তার হাতে নতুন জামা এনে দেয় এবং তা পরতে বলে। এই সুযোগেই মাহিরা পালিয়ে যায়। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দৌঁড়ে একটি সড়কে উঠে আসে এবং র‍্যাব-৪ এর একটি গাড়ি দেখে সাহায্য চায়। র‍্যাব সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়

মাহিরার উদ্ধার ও তার বর্ণনার পরপরই শুরু হয় ব্যাপক বিতর্ক। অনেকেই তার বক্তব্যে অসঙ্গতি খুঁজে পান। অপহরণ হলে মুক্তিপণ দাবি বা শারীরিক নিপীড়নের প্রমাণ কোথায়? মাহিরার শরীরে ছিল না কোনো আঘাতের চিহ্ন, মানসিক ভীতির লক্ষণও ছিল না বলে দাবি করেছেন অনেকে।

আরও প্রশ্ন উঠেছে তার স্মৃতিশক্তি হারানোর ব্যাপারে। আট ঘণ্টার ব্যবধানে কীভাবে তিনি পুরো ঘটনা ভুলে গিয়েছিলেন, আবার পরক্ষণেই অনেক কিছু স্পষ্টভাবে মনে করতে পারছেন—এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ও ট্রল

সামাজিক মাধ্যমে যেই নেটিজেনরা আগে মাহিরার নিখোঁজে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, তারাই এখন উল্টো ট্রল করছেন তাকে। কেউ বলছেন “পরীক্ষার চাপ এড়াতে নাটক”, কেউ বলছেন “প্রেমিকের সঙ্গে যাওয়ার প্ল্যান ফেইল করেছে।” আবার কেউ কেউ মাহিরার পাশে দাঁড়িয়েও বলছেন, “যদি সত্যিই কিছু ঘটে থাকে, তবে আমাদের ট্রলের কারণে সে যেন আর সাহস না হারায়।”

সত্যতা কোথায়?

এখনো স্পষ্ট নয় মাহিরার ঘটনার আসল রহস্য। এটি কি একজন তরুণীর মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ? নাকি সমাজে চলমান অন্য কোনো অন্ধকার চক্রের শিকার হয়েছিল সে? কিংবা পুরোটাই সাজানো কোনো নাটক?

এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। আপাতত মাহিরা সুস্থ আছেন এবং পরিবারের সাথেই অবস্থান করছেন। তবে এই ঘটনায় তার মানসিক ও সামাজিক পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব পড়ছে, সেটাও ভাবনার বিষয়।

মাহিরার ঘটনা যেন এক পৃষ্ঠার উপন্যাস—যেখানে রহস্য, রোমাঞ্চ, উদ্বেগ আর প্রশ্ন একত্রিত হয়ে আছে। সমাজ এখন উত্তর খুঁজছে—সত্যি কী হয়েছিল সেদিন? আর সেই উত্তর হয়তো লুকিয়েই আছে শুধুমাত্র মাহিরার অন্তরালে।

সম্পর্কিত-
0%
0%
0%
0%