এফএ কাপ ফাইনালে মুখোমুখি ম্যানচেস্টার সিটি ও ক্রিস্টাল প্যালেস: ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে ঈগলস

ছবিঃ সংগ্রহকৃত
বিশ্বের প্রাচীনতম ফুটবল প্রতিযোগিতা এফএ কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটি ও ক্রিস্টাল প্যালেস। ফুটবলপ্রেমীদের কল্পনায় বহু আগেই জায়গা করে নেওয়া এই আসরের ফাইনাল ঘিরে রয়েছে তীব্র উত্তেজনা।
এফএ কাপের মাহাত্ম্যই এমন যে এখানে তৃতীয় বা চতুর্থ স্তরের দলও উঠে আসে চূড়ান্ত লড়াইয়ে, চমকে দেয় বড় বড় ক্লাবকে। যদিও ক্রিস্টাল প্যালেস কোন ছোটখাটো ক্লাব নয়, তবে তাদের প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার সিটি নিঃসন্দেহে আধুনিক ফুটবলের অন্যতম দানবীয় দল।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ফাইনাল দুই দলের জন্য?
ক্রিস্টাল প্যালেসের সামনে রয়েছে ইতিহাস গড়ার সুবর্ণ সুযোগ। ১১৯ বছরের ইতিহাসে এখনো কোনো বড় ট্রফি জেতেনি ক্লাবটি। দুইবার এফএ কাপের রানার্সআপ হলেও শিরোপার দেখা মেলেনি।
অন্যদিকে, গার্দিওলার অধীনে ট্রফিতে ভরা মৌসুম কাটানো ম্যানচেস্টার সিটি এবার একদমই ব্যতিক্রম। যদি এ ম্যাচে হেরে যায়, তবে তা হবে ২০১৬-১৭ সালের পর প্রথম ট্রফিশূন্য মৌসুম। তাই মরিয়া সিটিজেনদের সামনে এটাই শেষ সুযোগ কোনো শিরোপা জয়ের।
প্যালেসের সাম্প্রতিক ফর্ম কেমন?
টটেনহ্যামের মাঠে ২-০ গোলের জয়ে ফাইনালের আগে চমৎকার প্রস্তুতি নিয়েছে প্যালেস। এই জয়ের মাধ্যমে তারা প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের সর্বোচ্চ ৪৯ পয়েন্ট অর্জনের রেকর্ড ছুঁয়েছে।
অস্ট্রিয়ান কোচ অলিভার গ্লাসনারের অধীনে ক্লাবটি গত মৌসুমে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগে সেরা দশে শেষ করেছিল। এবার তা না হলেও, এফএ কাপ অভিযানে তারা চমক দেখিয়েছে। সেমিফাইনালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট অ্যাস্টন ভিলাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে তারা।
প্যালেসের মূল খেলোয়াড় কে?
ইংলিশ মিডফিল্ডার এবেরেচি এজে প্যালেসের ভরসার নাম। শেষ চার ম্যাচে পাঁচ গোল করে তিনি দলের প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন।
এজের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের আরও তিন আন্তর্জাতিক তারকা – ডিন হেন্ডারসন, মার্ক গেহি ও অ্যাডাম হোয়ার্টন – ফাইনালে শুরুর একাদশে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এজে বলেছেন, “এই ট্রফি আমাদের সবকিছু। আমরা জানি এর গুরুত্ব কতটা, সমর্থকদের জন্য কী মানে রাখে। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্সটাই দিতে চাই।”
জয় পেলে ক্লাব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপা লিগে খেলার সুযোগ পাবে প্যালেস।
ম্যানচেস্টার সিটির সাম্প্রতিক ফর্ম কেমন?
তালিকার তলানির দল সাউথহ্যাম্পটনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে সিটি। ফলে প্যালেসের আশা বেড়েছে।
তবে শেষ ১০ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে সিটি। এরমধ্যে গত মাসেই প্রিমিয়ার লিগে ৫-২ ব্যবধানে প্যালেসকে হারায়, যদিও প্রথমে ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল তারা।
এটা কি কেভিন ডি ব্রুইনার বিদায়ী ম্যাচ?
সিটির হয়ে কেভিন ডি ব্রুইনের এটি হতে পারে শেষ বড় ম্যাচ। দশ বছরের সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারে ১৪টি বড় ট্রফি জেতা বেলজিয়ান মিডফিল্ডার এবার ক্লাব ছাড়তে যাচ্ছেন।
তার সতীর্থ আর্লিং হালান্ড বলেন, “সে এখানে অসাধারণ সময় কাটিয়েছে। এখনো একটুখানি বাকি, আরেকটা ট্রফি যোগ করতে পারলে সেটাই হবে পরিপূর্ণ বিদায়।”
কেন সিটির জন্য মৌসুমটি ‘ভয়ানক’?
টানা চারটি লিগ শিরোপা জয়ের পর এবার সিটি লড়ছে সেরা পাঁচে থাকতে – যা গার্দিওলার অধীনে খুবই অস্বাভাবিক চিত্র।
একটি ট্রফিও না পেলে এই মৌসুম সিটির জন্য ‘ভয়ানক’ হিসেবে পরিগণিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন হালান্ড।
প্যালেসের সবচেয়ে স্মরণীয় এফএ কাপ মুহূর্ত?
১৯৯০ সালের এফএ কাপ অভিযানকে এখনো সবচেয়ে আবেগঘন অধ্যায় মনে করে প্যালেস সমর্থকরা।
সেমিফাইনালে শিরোপাধারী লিভারপুলকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল তারা। ৯-০ ব্যবধানে লিগে হারা দলটি রীতিমতো ঘুরে দাঁড়ায় সেমিফাইনালে। অতিরিক্ত সময়ে অ্যালান পারডিউর গোলে ৪-৩ ব্যবধানে জয় পায় প্যালেস।
ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র হয়। রি-প্লে ম্যাচে লি মার্টিনের গোলে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় ইউনাইটেড – যা ছিল স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের প্রথম ট্রফি।
কতবার এফএ কাপ জিতেছে সিটি?
ম্যানচেস্টার সিটি সাতবার এফএ কাপ জিতেছে। প্রথম জয় ১৯০৪ সালে এবং সর্বশেষ জয় ২০২৩ সালে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে হারিয়ে।
হেড টু হেড পরিসংখ্যান
এই ম্যাচটি দুই দলের মধ্যে ৭৪তম দেখায়। প্রথম ম্যাচ হয়েছিল ১৯২১ সালে, যেখানে প্যালেস ২-০ গোলে জিতেছিল।
সর্বমোট ৩৯ বার জয় পেয়েছে সিটি, আর ১৭ বার জয় পেয়েছে প্যালেস। শেষ সাত ম্যাচে প্যালেস জয় পায়নি, সিটি জিতেছে চারটি।
দুই দলের সর্বশেষ দলীয় খবর:
ম্যানচেস্টার সিটি:
আর্লিং হালান্ড চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন এবং ফাইনালে শুরুর একাদশে থাকার কথা। মিডফিল্ডার রডরি ধীরে ধীরে ফিট হচ্ছেন, তবে সম্ভবত ফাইনালের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নন।
ক্রিস্টাল প্যালেস:
মিডফিল্ডার অ্যাডাম হোয়ার্টন গোড়ালির চোট থেকে ফিরেছেন। ফলে প্যালেস পুরোপুরি ফিট স্কোয়াড নিয়েই নামছে ফাইনালে।
শেষ কথা:
সিটি যখন মর্যাদার শেষ ট্রফির জন্য মরিয়া, প্যালেস তখন প্রথমবার কোনো বড় ট্রফি জিতে ইতিহাস গড়তে প্রস্তুত। সুতরাং, ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শনিবারের লড়াই হতে চলেছে এক স্মরণীয় অধ্যায়।